টাকা ফেরত প্রসঙ্গে যা বললেন ইভ্যালির শামীমা নাসরিন

চট্রলার কণ্ঠ ডেস্ক

বন্ধ থাকা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি ১৫অক্টোবর নতুন করে আবারও ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেছেন কোম্পানির চেয়ারপার্সন শামীমা নাসরিন।

সংবাদ সম্মেলনে বারবার প্রশ্ন করা হয়েছে লাখ লাখ পাওনাদার তাদের টাকা কবে ফেরত পাবেন কিনা, কিন্তু পরিষ্কার করে তার কোন উত্তর দেওয়া হয়নি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে গ্রাহক, মার্চেন্ট ও অন্যান্য সংস্থার কাছে ইভ্যালির দেনা সাড়ে পাঁচশ কোটি টাকার মতো।
এখনো ঠিক নেই পাওনাদারদের অর্থ কবে পরিশোধ হবে এবং কিভাবে পরিশোধ হবে সেই প্রশ্নের উত্তরে কোম্পানির চেয়ারপার্সন তার লিখিত বক্তব্যে জানিয়েছেন, ‘পুরাতন ডেলিভারি এবং পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা টাকা রিফান্ড করার ক্ষেত্রে আমাদের যথাযথ পরিকল্পনা রয়েছে’।
কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা দিতে পারেননি তিনি। ঘুরেফিরে কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক এবং তার স্বামী মোহাম্মাদ রাসেলের মুক্তির বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন যে তার এবং মোহাম্মাদ রাসেল গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে এখনো পর্যন্ত কোম্পানিটির যে সার্ভার ছিল সেটি বন্ধ রয়েছে।
তিনি বলেন, সার্ভারের পেমেন্ট গেটওয়েতে যে অর্থ আটকে রয়েছে তা সার্ভার না খোলা পর্যন্ত পাওয়া সম্ভব হবে না কারণ সার্ভারের যে আইডি কোড সেটির একজন মাত্র অথরাইজড অ্যাডমিন হচ্ছেন কারাগারে থাকা নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মাদ রাসেল। সার্ভারের আইডি কোড একটি জটিল নম্বর এবং সচরাচর ব্যবহৃত হয় না। এটি আসলে মুখস্থ থাকার বিষয় নয়। এটি হারিয়ে যাওয়ার ফলে সার্ভার রিকভারি জটিল হয়ে পড়েছে।
মোহাম্মাদ রাসেল মুক্ত না হলে পাসওয়ার্ড রিকভারি সম্ভব হচ্ছে না বলে তিনি দাবি করেন। মোহাম্মাদ রাসেল আইডি কোড ভুলে গেছেন এবং যেখানে তা সংরক্ষিত ছিল সেখান থেকে তা হারিয়ে গেছে বলে জানানো হয়েছে। আইডি কোড রিকভারি পদ্ধতির জন্য তার জামিন প্রয়োজন বলে বারবার সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে।
শামীমা নাসরিন বলেন, বিকল্প কোনো উপায়ে সার্ভার চালু করা যায় কিনা সেজন্যে অ্যামাজনের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু রাসেল কারাগারে থাকায় পুরো প্রক্রিয়াটি জটিল রূপ ধারণ করেছে।
যেসব অভিযোগ ইভ্যালির বিরুদ্ধে
ইভ্যালিতে পোশাক থেকে শুরু করে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, মোটরসাইকেল, খাদ্য-পণ্যসহ যত ধরণের পণ্য বিক্রি হয় তার প্রায় সব কিছুর বিপরীতে ব্যাপক ছাড় আর লোভনীয় ক্যাশব্যাক অফার দেয়া হতো। তাতে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল ই-কমার্স প্লাটফর্মটি। মাত্র তিন বছরে এই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের সংখ্যা চল্লিশ লাখ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বিক্রেতা ছিল তিরিশ হাজারের মতো। কিন্তু সেই উত্থান তিন বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই থেমে যায়। এর গ্রাহক ও সরবরাহকারীদের কাছ থেকে ব্যাপক পরিমাণে অগ্রিম টাকা নিয়েছিল কোম্পানিটি। শুরুর কিছুদিন পর থেকেই প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী ডেলিভারি দিতে ব্যর্থ হবার অভিযোগ শোনা যাচ্ছিল।
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন মোহাম্মদ রাসেল এবং শামীমা নাসরিন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সেসময় বলেছিল প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহক ও সরবরাহকারীদের কাছ থেকে অগ্রিম যে টাকা নিয়েছে তার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে না। খবর বিবিসি বাংলার
তাদের কত টাকা দেনা সেনিয়ে নানা সময়ে নানা রকম তথ্য এসেছে। ধারাবাহিকভাবে তা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ঢাকায় ইভ্যালি কোম্পানির গ্রাহকরা অর্থ ফেরত দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ প্রতিবাদ করেন। পাশাপাশি, রাসেলের মুক্তির দাবিতেও বিক্ষোভ হয়েছে। গত বছর নভেম্বরে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় আদালতের গঠন করা বোর্ড কাজ শুরু করে।
গ্রাহক ঠকানোর মামলায় মোহাম্মদ রাসেল এখনো কারাগারে রয়েছেন। তবে তার স্ত্রী শামীমা নাসরিন এপ্রিলে জামিন পাওয়ার পর পুনরায় কোম্পানির চেয়ারম্যানের পদে আসীন হন। নানা ঘটনার পর শামীমা নাসরিন এবং পরিবারের কয়েকজন নিকটাত্মীয়কে নিয়ে নতুন করে বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
জামিনে মুক্ত হওয়ার পর এই প্রথম সংবাদ সম্মেলন করলেন শামীমা নাসরিন।
যেভাবে ব্যবসা চলবে এই প্রসঙ্গে
শামীমা নাসরিন জানিয়েছেন, তারা পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে পণ্য বুঝে নেয়ার সময় অর্থ পরিশোধ বা ক্যাশ অন ডেলিভারি, পিক অ্যান্ড পে, ক্যাশ বিফোর ডেলিভারি এই তিনটি পদ্ধতিতে পণ্য বিক্রি করবেন। বিক্রেতা সরাসরি ক্রেতার কাছ থেকে এই পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমে অর্থ গ্রহণ করবেন। ইতোমধ্যেই তারা তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পাতায় পণ্যের বিজ্ঞাপন শুরু করেছেন।
কিন্তু তাদের কাছে নতুন করে ব্যবসা পরিচালনার জন্য কত বিনিয়োগ রয়েছে, নতুন করে ব্যবসা শুরু করার পর যারা টাকা পাবেন তাদের অর্থ পরিশোধ শুরু হবে কিনা, এত বড় একটি প্রতিষ্ঠানে সার্ভারের আইডি কোড কেন একজনের কাছে ছিল, কেন বিকল্প অ্যাডমিন ছিল না এসব বিষয় দীর্ঘ দেড় ঘণ্টার সংবাদ সম্মেলনে খোলাসা হয়নি।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক