আফতাব উদ্দিন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা হাজারো রোগীর ভিড়ে দালালদের দৌরাত্ম্য থেমে নেই। হাসপাতালের ভিতরে বাইরে ওতপেতে থাকা দালালদের চেনা দায়। কমিশনের লোভে হাসপাতালে আসার পথে কিংবা হাসপাতাল থেকে রোগীদেরকে বিভ্রান্ত করে বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যায় দালালরা। তাদের কারণে রোগী ও তাদের স্বজনেরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এমনকি তাদের সর্বস্বান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা, হাসপাতালের আশপাশে গড়ে ওঠা বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকেরা এই দালাল চক্র গড়ে তুলেছেন।
সংশ্লিষ্টদের মতে, চমেক হাসপাতালে অবাধে দালালদের উৎপাতের কারণে প্রতিদিন বড় একটা অঙ্কের টাকা চলে যাচ্ছে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এমনকি চমেক হাসপাতালের আশপাশে গড়ে ওঠা অর্ধশতাধিক হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আয়ের উৎস এই হাসপাতাল। দালালদের কারণে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে অসহায় ও গরীব মানুষগুলো প্রকৃত সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দালালদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
তবে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দালালদের উৎপাত বন্ধের লক্ষ্যে যথেষ্ট তৎপর রয়েছে। সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামরার মাধ্যমে হাসপাতাল এলাকা মনিটরিং করছে। পুরো হাসপাতালে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর মাধ্যমে দালাল উৎপাত নিয়ন্ত্রণে কাজ চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক দালালকে আটক করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানা যায়।
এদিকে গতকাল বুধবার সকালে চমেক হাসপাতালের ৩৩ নং গাইনি ওয়ার্ড থেকে মো. সাহাব উদ্দিন (২৮) নামে এক দালালকে আটক করেছে পুলিশ।
হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুর উল্লাহ আশেক জানান, আটককৃত ব্যক্তি সন্দেহজনকভাবে ঘুরাঘুরি করছিল। সে নানাভাবে রোগীদের হয়রানি করতো। আজ (বুধবার) সকালে তাকে গাইনি ওয়ার্ড থেকে আটক করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আটক সাহাব উদ্দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার ধামসার গ্রামের মিয়াবাড়ির জাহের মিয়ার ছেলে।
গত ২৫ অক্টোবর রোগীর সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে চমেক হাসপাতাল থেকে আলম বাবু, মো. জিসান, মো. ফরহাদ ও মো. জুয়েল নামে আরো ৪ দালালকে আটক করে পুলিশ। আটককৃতরা হাসপাতালের সামনে বিভিন্ন ওষুধের দোকান ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালাল বলে পুলিশ জানায়।
একইভাবে গত ২২ সেপ্টেম্বর গাইনি ওয়ার্ড থেকে এসি চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় মিলনসহ দুজনকে আটক করে পুলিশ। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ওই ব্যক্তি এসি চুরির কথা স্বীকার করেন। মিলন জানান, হাসপাতালের কর্মচারি খালেদা বেগমের কথায় বাইরে থেকে আসা এক লোককে এসি নিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছিলেন তিনি। এসি কোথায় এবং কেন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তার কিছুই জানতেন না মিলন।
এরপর গত ১৭ সেপ্টেম্বর চমেক হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের সামনে থেকে ওষুধসহ আরাফাতুল ইসলাম নামে চোর চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এসময় তার কাছ থেকে ২৫ রকমের ওষুধ উদ্ধার করা হয়।
আর গত ১১ জুলাই চমেক হাসপাতাল থেকে রোগীর জন্য বরাদ্দের ওষুধ চুরির ঘটনায় হাসপাতালের স্পেশাল ওয়ার্ডবয় দিলীপ কুমার নাথ (৪৫), আশিষ দাস (৪৫) ও পলাশ ধরকে (৩৮) আটক করে পুলিশ।
এছাড়া চলতি বছরের ৭ ফেব্রæয়ারি হাসপাতাল থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার সরকারি ওষুধ চুরি করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ২৬ নং ওয়ার্ডের স্টাফ আশু চক্রবর্তী ও আউটসোর্সিং কর্মচারী মো. সৈয়দকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, হাসপাতালে দালাল নিমূর্ল করার লক্ষ্যে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে আমরা ‘কুইক রেসপন্স টিম’ গঠন করেছি। আর সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক হাসপাতালের কার্যক্রম মনিটরিং করা যাচ্ছে। যারা রোগীদের চিকিৎসা সেবায় হয়রানি কিংবা বাধাগ্রস্ত করবে সে যেই হোক সাথে সাথে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি