কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দেশি-বিদেশি পর্যটকের ঢল নেমেছে। টানা তিন দিনের ছুটিতে পর্যটন নগরী এখন টইটম্বুর। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ছুটি তিনদিন হলেও পর্যটকদের ভিড় থাকবে পুরো ডিসেম্বর মাসজুড়েই। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮-১০ লাখ পর্যটকের আগমন ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হতে পারে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক ছুটে আসেন কক্সবাজারে। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যটকে ঠাসা থাকবে কক্সবাজার। হোটেল-মোটেলের কোনো কক্ষ খালি নেই। ডিসেম্বরের শুরুতেই বেশির ভাগ হোটেলের ৮০-৯০ শতাংশ অগ্রিম বুকিং হয়ে যায়। কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান জানান, এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি পর্যটকের উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। পর্যটকের আনাগোনা ও ভিড় পুরো ডিসেম্বর মাসজুড়ে থাকবে। বেশি পর্যটকের আগমন ঘটায় খুবই খুশি ব্যবসায়ীরা।
সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবারের সঙ্গে যোগ হয়েছে বড়দিনের ছুটি। সব মিলিয়ে তিন দিনের টানা ছুটিতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এখন লাখ লাখ পর্যটকে টইটম্বুর। পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছেন টুরিস্ট পুলিশ ও জেলা প্রশাসকের বিচ কর্মীরা।
শুক্রবার দুপুরে সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা, লাবণী ও কলাতলী পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, লাখ লাখ মানুষ সমুদ্র স্নানে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ বিচের বালি নিয়ে মনের মতো নকশা তৈরি করছেন। কেউ কেউ সমুদ্রের বালিয়াড়িতে নিজের ও প্রিয়জনের নাম লিখে প্রকাশ করছেন ভালোবাসা। আবার কেউ কেউ মেতে উঠছেন ফুটবল ও ভলিবলসহ নানা ধরনের খেলায়। শুক্রবার সকাল থেকে যানজট আর জনজটে একাকার কক্সবাজার শহর। অতিরিক্ত পর্যটকের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন।
হোটেল ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান জানান, এবার টানা ছুটিতে ভ্রমণপিপাসুদের ব্যাপক সাড়া পড়েছে কক্সবাজারে। প্রায় হোটেল-মোটেল আগে থেকেই বুকিং হয়ে গেছে। আগামী ২৪ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অগ্রিম বুকিং রয়েছে হোটেল-মোটেলের অধিকাংশ কক্ষ।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস রেস্ট মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, ডিসেম্বর হচ্ছে পর্যটন মৌসুমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় স্কুল, কলেজ ও কোর্ট-কাচারি বেশির ভাগ বন্ধ থাকে। ফলে পরিবার-পরিজন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষক, প্রেমিকযুগল ছুটে আসেন কক্সবাজারে। আগামী এক সপ্তাহ কক্সবাজারে অন্তত ৮-১০ লাখ পর্যটক ঢুকতে পারে। সামগ্রিক পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে কয়েক হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হতে পারে বিভিন্ন খাতে।
কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, এবারের ছুটিতে কক্সবাজারে বেশকিছু পর্যটক এসেছেন। তাই আমাদের টুরিস্ট পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে মাঠে।
বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, কক্সবাজার পর্যটন শিল্পকে আরও আধুনিক, আরও উন্নত, আকর্ষণীয় করার লক্ষে ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। পর্যটন স্পটগুলো সিসিটিভির আওতায় আনার কাজ চলছে। সারা বছর যাতে কক্সবাজারে পর্যটকের আনাগোনা থাকে সে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পর্যটনশিল্প উন্নয়নে ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।
পর্যটকে মুখর বান্দরবান :
সাপ্তাহিক ও বড়দিনের টানা ৩ দিনের ছুটিতে পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে বান্দরবানের সব পর্যটন কেন্দ্রগুলো। পাহাড়ে জঙ্গি বিরোধী অভিযানের কারণে নিষেধাজ্ঞার ফলে শীত মৌসুমের শুরুতে পর্যটকের সমাগম না ঘটলেও টানা ছুটি থাকায় ও নিষেধাজ্ঞা শিথিল করায় প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটেছে বান্দরবানে।
গতকাল শুক্রবার মেঘলা, নীলাচল, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক, নীলগিরি, নীল দিগন্তসহ জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পট ঘুরে দেখা যায়, সবগুলো দশর্নীয় স্থানে পর্যটকের উপচে পড়া ভীড়। পর্যটকরা পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে চাঁদের গাড়িতে করে ছুটে বেড়াচ্ছেন এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে। কেউ বা ছুটে যাচ্ছেন রেমাক্রী নাফাকুমের সৌন্দর্য্য দেখতে। আবার কেউ যাচ্ছেন সুউচ্চ পাহাড়ের সৌন্দর্য্য দেখতে। এক কথায় সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত পর্যটকরা চষে বেড়াচ্ছেন বান্দরবানের সৌন্দর্য্য।
ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা কয়েকজন পর্যটক জানান, নগর জীবনের ব্যস্ততা ছেড়ে একটু প্রশান্তি নিতে পাহাড়ে ঘুরতে আসেছি। আসলে শীতে পাহাড় এতটা সুন্দর হয়, যা স্ব-চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না। পাহাড়, মেঘ-বৃষ্টি একসাথে মিশে একাকার হয়ে গেছে। তারা আরও বলেন, আমরা অনেকেই ঘুরতে দেশের বাহিরে ভ্রমণে যাই। অথচ আমাদের দেশে অনেক সুন্দর সুন্দর দেখার মত জায়গা রয়েছে। তাই ভ্রমণপিপাসুঁদের বলবো যারা এখনো বান্দরবানে আসেন নাই, তারা একবার হলেও বান্দরবানের সৌন্দর্য্য উপভোগ করে যান।
এদিকে বান্দরবানের পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ঘদিন আমাদের পর্যটন ব্যবসা বন্ধ ছিল। শীত মৌসুমের শুরুতে পর্যটক না আসলেও বড়দিন, সাপ্তাহিক ছুটি ও স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় টানা ছুটিতে অনেক পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। আমরা আগত পর্যটকদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। সামনের দিনগুলোতেও আরও পর্যটকের সমাগম ঘটবে বলেও আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
বান্দরবান জেলার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নকিবুল ইসলাম জানান, সাপ্তাহিক ও বড়দিন উপলক্ষে টানা ৩ দিনের ছুটি থাকায় বান্দরবানে প্রচুর পর্যটক এসেছেন। প্রতিটি স্পটে সার্বক্ষণিক পোশাক এবং সাদা পোশাকে আমাদের ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল টিম কাজ করে যাচ্ছে, যাতে করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত পর্যটকরা নির্বিঘেœ ঘুরাফেরা করতে পারেন। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমরা সর্বদা প্রস্তুত আছি বলে জানান ট্যুরিস্ট পুলিশের এ কর্মকর্তা।
বান্দরবান জেলায় পর্যটকদের সেবায় রয়েছে শতাধিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউস এছাড়াও পর্যটক পরিবহনে রয়েছে ৪ শতাধিক চাঁদের গাড়ি, সব মিলিয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জেলার ২০ হাজার মানুষ পর্যটন ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট।
পর্যটকদে ভিড় রাঙামাটি : সাপ্তাহিক ছুটি ও বড়দিন মিলে টানা তিন দিনের বন্ধে পর্যটকের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি। প্রাকৃতিক নৈসর্গে ঘেরা হ্রদ-পাহাড়ের শহরের বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকরা ভিড় করছেন।
রাঙামাটির সাজেক ভ্যালি ভ্রমণপিপাসুদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। মেঘ-পাহাড়ের লুকোচুরি উপভোগ করতে সারা বছর পর্যটকের পদচারণায় মুখর থাকে এই স্থান। এবার সাপ্তাহিক ছুটির সাথে বড় দিনের ছুটি যুক্ত হওয়ায় টানা তিন দিনের বন্ধে ইতোমধ্যে মেঘের রাজ্য সাজেকের ছোট-বড় সব কটেজ শতভাগ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, মৌসুম শুরুতে কিছুটা কম পর্যটক আসলেও আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভালো বুকিং রয়েছে। পর্যটক আসায় খুশি ব্যবসায়ীরা।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা মাফিয়া আক্তার বলেন, ‘এখাসে আসলেই মন ভালো হয়ে যায়। চারদিকে সবুজ, স্বচ্ছ হ্রদের পানি তার ওপর ঝুলন্ত সেতু। অসাধারণ এক দৃশ্য।’
হোটেল স্কোয়ার পার্কের মালিক মো. নেয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘মৌসুম শুরু হওয়ার পর পর্যটক রাঙামাটি আসতে শুরু করেছে। বিশেষ করে সপ্তাহিক ছুটির দিন সেই সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। ইতোমধ্যে আমার হোটেল না পুরো রাঙামাটিতে হোটেলের শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে।’
রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক সৃজন বড়–য়া বলেন, ‘সকাল থেকে প্রচুর পর্যটক আসে ঝুলন্ত সেতু এলাকায়। আবাসিক রুমে প্রায় ৯০ ভাগ বুকিং রয়েছে। আজ (শুক্রবার) সকাল থেকে সন্ধ্যায় পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার মানুষ ঝুলন্ত সেতু এলাকায় প্রবেশ করেছে।’