বছরজুড়েই অপ্রতিরোধ্য স্বর্ণের চোরাচালান

নীতামালার মাধ্যমে বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানির সুযোগ, বিভিন্ন সংস্থার কঠোর নজরদারি এবং আদালতে চোরাচালান মামলায় আসামির সাজার পরও শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে স্বর্ণের চোরাচালান ঠেকানো যায়নি। বিদায়ী বছরজুড়েই বিমানবন্দর দিয়ে স্বর্ণ পাচার একপ্রকার অপ্রতিরোধ্যই ছিল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুল্ক তদন্ত ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার অভিযানে অনেকটা নিয়মিতভাবেই স্বর্ণের অবৈধ চালান আটক হলেও পাচার হয়েছে তার কয়েকগুণ বেশি। বছরের একেবারে শেষদিকে এসেও গতকাল বুধবার শাহ আমানতে প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের আড়াই কেজি অবৈধ স্বর্ণসহ জসিম উদ্দিন নামে দুবাইফেরত এক যাত্রীকে আটক করা হয়েছে।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, বৈশ্বিক অতিমারী করোনার অভিঘাত স্বাভাবিক হতে শুরু করার সাথে সাথে শাহ আমানত ও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে অবৈধ পন্থার পাশাপাশি শুল্ক পরিশোধ করে স্বর্ণ আমদানির পরিমাণও হঠাৎ করে বাড়তে থাকে। গত বছরের কেবল জানুয়ারি মাসেই বিদেশফেরত যাত্রীরা বিমানবন্দর কাস্টমসে শুল্ক পরিশোধের মাধ্যমে ছাড় করিয়েছেন ১১ হাজার ৬২ পিস স্বর্ণের বার। আর ২০২০ সালের শেষ তিন মাস ও ২০২১ সালের প্রথম মাস মিলিয়ে বিমানবন্দর দিয়ে রেকর্ড চার মেট্রিক টন স্বর্ণের বার ছাড় করানো হয়েছে। এসব স্বর্ণের বারের সিংহভাগই নিয়ে আসেন দুবাইফেরত যাত্রীরা। চোরাচালানের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারের মত দেশের জুয়েলারি শিল্প খাতেও স্বর্ণের দামে অস্থিরতা অব্যাহত থাকার মধ্যেই বৈধপথে বা শুল্ক পরিশোধ করে রেকর্ড ছাড়িয়ে স্বর্ণের বার আমদানির প্রবণতাকে ‘অস্বাভাবিক’ বলে মন্তব্য করেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, দেশের স্বর্ণের বাজারে বিদ্যমান চাহিদার পাশাপাশি করোনাকালে সামাজিক ও অর্থনৈতিক খাতে বিদ্যমান অনিশ্চয়তার মধ্যে বৈধপথে এত বেশি পরিমাণে স্বর্ণের বার আমদানির কোনও সামঞ্জস্যতা নেই। তাই শুল্ক পরিশোধ করে এসব স্বর্ণের বার দেশে আনা হলেও সেগুলোর গন্তব্য ভিন্ন। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বিভিন্ন দেশে জারি করা লকডাউন বা অবরুদ্ধ অবস্থা ধীরে ধীরে তুলে নেয়ার পর মূলতঃ গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকেই আন্তর্জাতিক রুটে সীমিত আকারে যাত্রীবাহী বিমান চলাচল শুরু হয়। এর মধ্যে গত বছরের পয়লা ও ১৫ অক্টোবর বিমানবন্দরে দায়িত্বরত জাতীয় গেয়েন্দা সংস্থা ও শুল্ক কর্তৃপক্ষ বিমানের পৃথক দুটি ফ্লাইট থেকে অবৈধ পথে নিয়ে আসা দুইশ’ ৪২ পিস স্বর্ণের দুটি চালান জব্দ করে। মূলত এরপর থেকেই বিমানবন্দর কাস্টমসে শুল্ক কর পরিশোধ করে স্বর্ণের বার ছাড় করানোর হিড়িক পড়ে। বিগত ২০১৯-২০ অর্থবছরের পুরো সময়জুড়ে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে শুল্ক পরিশোধ করে বা বৈধপথে সবমিলিয়ে একশ’ চার কেজির কিছু বেশি স্বর্ণের বার এনেছিলেন বিদেশফেরত যাত্রীরা। পরবর্তী বছরে সেখানে বৈধ উপায়ে স্বর্ণ আমদানির পরিমাণ প্রায় ৪৫ গুণ বৃদ্ধি পায়। অপরদিকে, গত বছরের শেষ তিন মাসে শাহ আমানত বিমানবন্দরে শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ তল্লাশি চালিয়ে ২৩ কেজিরও বেশি স্বর্ণের বার জব্দ করে। চলতি বছরের গত দশ মাসে বিমানবন্দরে একশ’ কেজির বেশি স্বর্ণের চালান জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে গত পয়লা জুন শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শারজাহ থেকে আসা এয়ার এরাবিয়া এয়ারলাইন্সের যাত্রী সাইফুল ইসলামের থেকে ৩৪টি স্বর্ণের বার ও একশ’ গ্রাম ওজনের একটি চেন জব্দ করা হয়। হয়েছে। জব্দকৃত প্রায় চার কেজি ওজনের স্বর্ণের বাজারমূল্য তিন কোটি টাকারও বেশি। তারও আগে গত জুলাই মাসে মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুটি অবৈধ স্বর্ণের চালান জব্দ করা হয়। এর মধ্যে গত ২২ জুলাই হাতব্যাগে থাকা ১২ টি অবৈধ স্বর্ণের বারসহ দুবাইফেরত যাত্রী মো. মিজান উদ্দিন (৩৪) কে আটক করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। জব্দকৃত স্বর্ণের বারগুলোর ওজন এক কেজি তিনশ’ ৯৮ গ্রাম। আনুমানিক বাজারমূল্য এক কোটি টাকা। এর তিনদিন আগে গত ১৯ জুলাই সকালে দুবাই থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের যাত্রী মো. রফিকুল ইসলামকে পায়ূপথে করে আনা দুটি স্বর্ণের বার ও বিদেশি সিগারেটের সাথে বিভিন্ন মালামালসহ আটক করা হয়। তিনি চলতি বছরের শুরু থেকে গত ১৯ জুলাই পর্যন্ত দশ বার বিদেশ ভ্রমণ করেন। এর মধ্যে গত ৬ জুন বিদেশ থেকে বৈধ পথে স্বর্ণের বার ও অলঙ্কার নিয়ে দেশে ফেরার সময় তাকে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সতর্ক করেছিলেন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক