তৃণমূলের কমিটি গঠনে কেন্দ্র থেকে করাকরি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংগঠন গুছাতে তৎপর যুবলীগ ও ছাত্রলীগ। সম্মেলন করে ওয়ার্ড থেকে জেলা পর্যন্ত সংগঠনে প্রাণ ফেরাতে নেয়া হয়েছে গুচ্ছ পরিকল্পনা। পৃথক ১৭টি নির্দেশনা দিয়ে তৃণমূলকে উজ্জীবিত করতে কাজ করছে আওয়ামী লীগের সহযোগী এই দুটি সংগঠন। আপাতত দুটি সংগঠনের তৃণমূলের কমিটি গঠনের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে কেন্দ্র। যুবলীগের ওয়ার্ড থেকে জেলা সম্মেলন করতে কেন্দ্রের অনুমতি লাগবে। ‘ডাউস’ কমিটি নয়, এখন থেকে ছাত্রলীগের সকল কমিটি হবে গঠনতন্ত্র মোতাবেক।
নেতাকর্মীরা জানান, এ দুটি নির্দেশনার পর থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতারা একপ্রকার কেন্দ্রমুখী হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় নেতাদের পছন্দের প্রার্থীর পরিবর্তে যাতে যোগ্য ও পরীক্ষিত নেতারা কমিটিতে আসে সেজন্যই কেন্দ্রীয় নেতারা এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন। তবে বিষয়টিকে ভালোভাবে নেননি জেলা ও উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তারা মনে করছেন, কেন্দ্রের এমন হস্তক্ষেপে নেতাকর্মীরা কেন্দ্রমুখী হয়ে পড়বেন। এতে সংগঠনের চেইন অব কমান্ড আরও বেশি ভেঙ্গে পড়বে।চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহব্বায়ক সালাউদ্দিন সাকিব বলেন, ‘তৃণমূলের কমিটি গঠনে অনেক জায়গায় অনিয়ম নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। যা কেন্দ্রীয় নেতারা অবগত আছেন। কেন্দ্র কমিটি গঠনের নিয়ন্ত্রণ নিলে আরেকটি সুবিধা আছে সেটি হলো স্থানীয় নেতাদের পছন্দের ব্যক্তিদের চেয়ে যোগ্য ও ত্যাগী নেতারাই কমিটিতে আসবে।’
জানা যায়, গত ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ যুবলীগের সাতটি শর্ত দিয়ে তৃণমূলের প্রতি জরুরী নোটিশ জারি করে। দপ্তর সম্পাদক সাক্ষরিত নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ওয়ার্ড থেকে উপজেলা পর্যন্ত কোনো সম্মেলন করতে গেলে সাতটি তথ্য যুবলীগের চেয়ারম্যানের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। সম্মেলন করতে গেলে স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ফোন নাম্বারও পাঠাতে হবে কেন্দ্রে। সম্মেলন আয়োজনের সকল ধাপ সম্পন্ন করেই তা কেন্দ্রের কাছে পাঠাতে হবে। এসব শর্ত মানতে পারলেই সম্মেলনের অনুমোদন দিবে কেন্দ্র। একপ্রকার কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণেই হবে তৃণমূল যুবলীগের সম্মেলন।
একইদিনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত ১০টি নির্দেশনা দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে দেয়া এই নির্দেশনায় বলা হয়, জেলা, মহানগর, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সম্মেলন ব্যতীত তাদের অধীনস্থ কোন ইউনিটের কমিটি গঠনর করবে না। যে সকল ইউনিটের কমিটি পূর্নাঙ্গ হয়নি দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের কেন্দ্র অথবা সংশ্লিষ্ট ইউনিটে পুর্নাঙ্গ কমিটি জমা দিতে হবে। এছাড়াও গঠনতন্ত্রে উল্লেখিত সংখ্যার অধিক সদস্য নিয়ে কোন ইউনিটের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে না।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জহুরুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, ‘কেন্দ্র যে নির্দেশনা দিয়েছে তা শতভাগ বাস্তবায়ন করা হবে। আগে কমিটি গঠন নিয়ে অনেক দুই নম্বরি হয়েছে। কমিটিতে মাদকাসক্ত কিংবা মাদক ব্যবসায়ীরা ঢুকেছে। এখন যাতে সেটি না হয় সেজন্য কেন্দ্র তদারকি করতে এমন শর্ত দিয়েছে। শর্তগুলো আমরা বাস্তবায়ন করে কেন্দ্রকে পাঠাবো। কেন্দ্র তদন্ত করে পরবর্তী নির্দেশনা দিবে।’
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর হোসেন তপু পূর্বদেশকে বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে যে নির্দেশনা দিয়েছে সেটি শিরোধার্য। গঠনতন্ত্র অনুসরণ করেই কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়েছেন। এখন কমিটি গঠনে উর্বর এবং পরীক্ষিত নেতারাই কমিটিতে আসবে। কেন্দ্র নির্দেশনাই মেনে কমিটি করতে হবে। আগে সময়ের চাহিদা ও সামনে নির্বাচনকে বিবেচনা করে কমিটি করতে গিয়ে অনেক বড় কমিটি করতে হয়েছে। এবার সেটি কমে যাবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক