২২ বছরের পেশাদার ক্যারিয়ার পার করে দিয়েছেন মাত্র দুটি ক্লাবে— ব্রাজিলের সান্তোস আর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক কসমসে। নিজের সময়ের সেরা ফুটবলার হলেও কখনো ইউরোপের ক্লাবে খেলেননি পেলে। পাননি ব্যালন ডি অর পুরস্কারও।
যিনি শতাব্দীর তো বটেই, সর্বকালের সেরা ফুটবলার হিসেবেও স্বীকৃত, তিনি কেন ইউরোপের জমজমাট লিগে খেলেননি— এ নিয়ে কৌতুহল অনেকের। জবাব হিসেবে অনেকেই বলেন ব্রাজিলের ‘রাষ্ট্রীয় সম্পদ’ হয়ে যাওয়ার কথা। ১৯৬২ সালে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ইয়ানিও কুয়াদ্রোস কর্তৃক রাষ্ট্রীয় সম্পদ ঘোষিত হওয়ার পর অন্য দেশের ক্লাবের বিক্রিযোগ্য ছিলেন না পেলে। যে কারণে তাঁর ইউরোপে খেলার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়।
কিন্তু পেলে নিজে এ বিষয়ে কী বলেছিলেন?২০০৫ সালে ফোরফোরটু ম্যাগাজিনে পাঠকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন পেলে। একটি প্রশ্ন ছিল ইউরোপে খেলতে না পারায় কোনো অনুশোচনা হয় কিনা, কোনো ক্লাবের কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়েছিলেন কিনা?
জবাবে কিংবদন্তি এই ফুটবলারের উত্তর ছিল এমন, ‘ইউরোপ থেকে প্রচুর প্রস্তাব ছিল। তবে সান্তোসেই আমার ভালো লাগছিল। ওই সময়ের সঙ্গে এখনকার পার্থক্য হচ্ছে, তখন এত টাকা দিত না যে প্রত্যাখ্যান করা যাবে না। আমার ক্যারিয়ারের শেষ দিকে রিয়াল মাদ্রিদ থেকে চমৎকার একটা প্রস্তাব এসেছিল। জুভেন্টাস থেকে জিওভানি আগনেলি আমাকে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফিয়াটের শেয়ার দিতে চেয়েছিল।’
পেলেকে যখন রিয়াল, জুভেন্টাস প্রস্তাব দেয়, তখন ব্রাজিলিয়ানদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন খেলতেন ইউরোপে। সেই স্মৃতিচারণা করে পেলে বলেন, ‘তখন ব্রাজিল থেকে তিন–চারজন খেলছিল ইউরোপে। আলতাফিনি (পালমেইরা থেকে মিলান), বোতেলহো (পালমেইরা থেকে ফিওরেন্তিনা) আর পরের দিকে দিদি, ভাবারা খেলতে গেল। আমি আসলে ক্লাব বদলাতে চাইনি। আমি তো এখনকার ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড়দের খোঁচা দিই। দেখি, ওরা ক্লাবের জার্সি পরে ব্যাজে চুমু খেয়ে বলে ‘‘আমি ম্যানচেস্টারকে ভালোবাসি’’। পরের বছর ক্লাব বদলে বলে ‘‘আমি রোমাকে ভালোবাসি’’। ওরা আসলে ক্লাব ভালোবাসে না। টাকা ভালোবাসে। একটা সময়ে সিদ্ধান্ত নিতেই হয়, টাকা না দল ভালোবাসি। আমি সান্তোসে ভালো ছিলাম।’
জুভেন্টাসে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা ২০১৮ সালেও বলেছেন পেলে। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে জুভেন্টাসে যাওয়ার পর পেলে ইনস্টাগ্রামে লিখেছিলেন, ‘ক্রিস্টিয়ানো, তোমার জন্য শুভকামনা। ব্যাপারটা অন্যরকমও হতে পারত। আমিও ওল্ড লেডিদের হয়ে খেলতে পারতাম। ১৯৬১ সালের এক সন্ধ্যায় ফিয়াটের মালিক সান্তোস প্রেসিডেন্টের কাছে আমাকে মিলিয়ন ডলার দিয়ে কিনতে চেয়েছিল।’