অস্ত্রোপচারের আগে রোগীদের যে চেতনানাশক ওষুধ দেওয়া হয়, সেই কেটামিন ব্যবহার করে এক ভয়ংকর মাদক তৈরি করে আসছিলেন ঢাকার বনানীর এক যুবক। ওই মাদক তিনি সরবরাহ করতেন নিজের পরিচিত লোকজনের কাছে। মূলত ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশান–বনানীর বিভিন্ন পার্টিতে অংশ নেওয়া তরুণ–যুবকেরা ছিলেন তাঁর এই মাদকের ক্রেতা।সম্প্রতি সৈয়দ নওশাদ (৩৮) নামের ওই যুবককে গ্রেপ্তার করেছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কর্মকর্তারা। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, এক দশকের বেশি সময় ধরে নওশাদ নিজের বাসায় তৈরি করা মাদকটি কোকেন নাম দিয়ে সরবরাহ করে আসছিলেন। তরুণ–যুবকেরা মাদকটি হাতে পেতেন গুঁড়া হিসেবে। পার্টিতে যোগ দেওয়া তরুণীদের অজান্তে কোমল পানীয়ের সঙ্গে তা মিশিয়ে খাওয়ানো হতো।
ডিএনসির কর্মকর্তারা জানান, নওশাদের বাবা একজন ব্যবসায়ী। উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর নওশাদ উচ্চশিক্ষার জন্য মালয়েশিয়ায় যান। তবে তিনি লেখাপড়া শেষ না করেই ২০০৩ সালে দেশে ফিরে আসেন। তরল কেটামিনকে পাউডারে পরিণত করার কৌশল তিনি মালয়েশিয়াতেই রপ্ত করেন। দেশে ফিরে তিনি বিভিন্ন পার্টিতে যাওয়া শুরু করেন। সেখানে নিয়মিত মাদক সেবন করতেন। একপর্যায়ে তিনি বাসাতেই মাদক সেবন শুরু করেন। একটি কক্ষকে ল্যাব বানিয়ে তিনি সেখানে কেটামিন তৈরি করতেন।যেভাবে তৈরি করা হতো মাদক
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) ঢাকা মহানগর উত্তর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মেহেদি হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ওষুধের দোকান থেকে কেটামিন ইনজেকশন কিনে নিতেন নওশাদ। পরে তার সঙ্গে একটি বিশেষ রাসায়নিক মেশাতেন তিনি। তখন ওই মিশ্রণ বাসার ওভেনে নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় পাউডারে পরিণত করতেন। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করে এই মাদক তিনি বিক্রি করে আসছিলেন। এক গ্রাম পাউডার ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন নওশাদ।
মেহেদি হাসান বলেন, কেটামিন মূলত অস্ত্রোপচারের রোগীকে অজ্ঞান করতে নির্দিষ্ট মাত্রায় ব্যবহার করেন চিকিৎসকেরা। এটা চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। নওশাদ কিছু অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এটা সংগ্রহ করতেন।