সংশ্লিষ্টদের হিসাবে গত এক বছরে সাজেক-বাঘাইহাট সড়কে ৩০টিরও বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গত কয়েকদিনে চারটি দুর্ঘটনায় প্রায় ১০ জন হতাহত হয়েছেন। সাজেক থানা পুলিশ জানায়, গত ২২ ডিসেম্বর পৃথক দুটি দুর্ঘটনায় চারজন আহত হন। ২৩ ডিসেম্বর নিহত হন এক মোটরসাইকেল আরোহী পর্যটক। ওই দুর্ঘটনায় আরো একজন আহতও হয়েছেন। সবশেষ আজ ২৬ ডিসেম্বর সড়ক দুর্ঘটনায় চারজন আহত হয়েছেন। এর আগে গত ১৭ আগস্ট জিপ উল্টে দুজন নিহত হন। পুলিশ বলছে, বেপরোয়া গতি ও অদক্ষ চালকের কারণেই ঘটছে বেশির ভাগ দুর্ঘটনা।
জানতে চাইলে সাজেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নূরল হক চট্টলার কণ্ঠকে বলেন, ‘ইদানীংকালে সাজেকের পথে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে। আমরা সাজেক যাওয়া-আসা গাড়িগুলোকে এক লেনে চলাচলের নির্দেশ দিলেও অনেকেই সেটি মানছে না। এছাড়া আঁকাবাঁকা ও উঁচুনিচু সড়ক এবং অদক্ষ্য চালকের কারণে দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে। এর মধ্যে গত ২২-২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ পাঁচদিনে সাজেকে চারটি সড়ক দুর্ঘটনার ঘটেছে। এসব ঘটনায় একজন মোটরসাইকেল চালক নিহত ও প্রায় ১০ জন আহত হয়েছেন।’
সাজেক কটেজ মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি চাইথোয়াই অং চৌধুরী জানান, সাজেকে প্রকৃতি উপভোগ করতে আসা পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। যে কারণে এ সড়কটি প্রশস্তকরণ এখন সময়ের দাবি।
সাজেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমা বলেন, ‘সাজেকে পর্যটক আসার হার দিন দিন বাড়ছে। বিভিন্ন সময়ে সড়ক দুর্ঘটনা খবরও আমরা পাচ্ছি। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সরকারের কাছে সড়কটি প্রশস্তকরণের দাবি জানাচ্ছি।’
এদিকে সড়ক নির্মাণকাজে জড়িত বেশ কয়েকজন প্রকৌশলী জানিয়েছেন, মূলত সাজেকের রইলুই পাহাড়চূড়ার নিচে দুই কিলোমিটার সড়কেই বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে। সমতল থেকে আসা ট্যুরিস্ট বাইকাররাও পাহাড়ি সড়কে চলাচলে দক্ষ না হওয়ায় গাড়ির স্পিড কনট্রোল করতে না পারায় ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকে দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছেন।
দীঘিনালা-সাজেক সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক মেজর এইচএম ইকরামুল হক জানান, সাজেক-দীঘিনালা সড়কটি ২০১৩ সালে চালু হয়েছে, পুরো সড়কের দৈর্ঘ্য ৪৫ কিলোমিটার। বর্তমানের এক লেনের সড়কটি প্রশস্ত মাত্র ৫ দশমিক ৫ মিটার। তাই এ সড়কটি দুই লেনে করার জন্য একটি প্রস্তাবনা করা হয়েছে। প্রকল্পটির অধীনে সড়ক হলে সেটি ৭ দশমিক ৯ মিটার প্রশস্তকরণ করা হবে। এছাড়াও সড়কে যে সাতটি বেইলি ব্রিজ রয়েছে, সেগুলো আরসিসি ব্রিজ করা হবে। এতে করে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশেই রোধ করা যাবে।
মেজর ইকরামুল বলেন, ‘বৃষ্টিপাতের কারণে সড়কের বিভিন্ন স্থানে মাটি ধস ও ব্রিজের গোড়ার মাটি সরে যায়, তখন আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুর করি।’
রাঙ্গামাটির জেলাপ্রশাসক মিজানুর রহমান চট্টগ্রাম কণ্ঠের সাথে ফোনালাপে বলেন, ‘সাজেক-বাঘাইছড়ি উপজেলা সদর থেকে অনেক দূরে। সেখানে প্রতিনিয়ত প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন। তবে এ সড়কে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।’