জাহাঙ্গীর আলম
রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় সাংবাদিক আবু আজাদকে আটকে রেখে মারধর করার অভিযোগে করা মামলার আসামি ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন চৌধুরী। হাইকোর্ট থেকে চার সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নিয়েছেন তিনি। এরপর ওই সাংবাদিককে আবারও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সিরাজ উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে। তিনি ইসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বেও রয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাঙ্গুনিয়ার ইসলামপুর ইউপি কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে সমর্থকদের উদ্দেশ্য বক্তব্য দেন সিরাজ উদ্দিন চৌধুরী। এ সময় মামলার বাদী সাংবাদিক আবু আজাদকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে, সাংবাদিক কয়ে (সাংবাদিক বলে) ইসলামপুরবাসীর মান ক্ষুন্ন করেছেন। ইসলামপুরের মানকে অসম্মানিত করেছেন। এসব করার জন্য যাঁরা পায়তারা করেছেন, তাঁদের কাছে অনুরোধ, আপনারা সাবধান হয়ে যান। আমার পেছনে যাঁরা এমন কুচক্রি করেছেন, তাঁদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেব।’
ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন চৌধুরীর এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘ইসলামপুর ডিজিটাল সেন্টার উদ্যোক্তা’ নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে লাইভ সম্প্রচার করা হয়। বক্তব্যটি ভাইরাল হলে নানা মহলে সমালোচনা ছড়িয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন চৌধুরী মোবাইল ফোনে চট্রলার কণ্ঠকে বলেন, ‘মামলার বাদী কিংবা ওই সাংবাদিককে উদ্দেশ্য করে কিছু বলিনি। এলাকায় যাঁরা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছেন, তাঁদের বলেছি।’
আবু আজাদ ইংরেজি দৈনিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের নিজস্ব প্রতিবেদক। গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর রাঙ্গুনিয়ার ইসলামপুর ইউনিয়নে অবৈধ ইটভাটার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হন তিনি। এ ঘটনায় আবু আজাদ বাদী হয়ে রাঙ্গুনিয়া মডেল থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন।
মামলায় ইসলামপুর ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মহিউদ্দিন তালুকদার মোহনকে প্রধান আসামি, ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন চৌধুরীকে দুই নম্বর আসামি করা হয়। এ ছাড়া ইটভাটার ব্যবস্থাপক কাঞ্চন কুমার ও কর্মী মো. কামরানকে আসামি করা হয়। ইটভাটার ব্যবস্থাপক কাঞ্চন কুমারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এ মামলার প্রধান দুই আসামি মহিউদ্দিন তালুকদার ও চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন চৌধুরী গত মঙ্গলবার হাইকোর্ট থেকে চার সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান।
জামিনের পর গতকাল ইসলামপুরে ফিরে চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন চৌধুরী এসব কথা বলেন। এ সময় তাঁর পাশে ছিলেন মামলার প্রধান আসামি মহিউদ্দিন তালুকদার।
এদিকে সাংবাদিক আবু আজাদকে আটকে রেখে মারধর করার ঘটনায় বাংলাদেশ সরকারকে দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার বৈশ্বিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। এর আগে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এক বিবৃতিতে এ ঘটনায় তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে কমিশনে আগামী ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছে