জমির কোন সুরাহা না হওয়ায় গতি নেই বে টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে। ভূমি অধিগ্রহণের ফাইলটি মন্ত্রণালয়ে আটকা পড়েছে। আগামী একশ’ বছরের বন্দর হিসেবে দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য বন্দরটি নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়া হলেও জমি নিয়ে সংকট চলছে। এতে করে প্রকল্পটি ঝুলে গেছে। প্রকল্পটির জন্য পরামর্শক নিয়োগ করা হলেও ভূমি অধিগ্রহণ, ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ এবং অপারেটর নিয়োগসহ নানা বিষয়ে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।সূত্র জানিয়েছে, নগরীর হালিশহর সমুদ্র উপকূলের জেগে উঠা একটি চরকে ঘিরে সৃষ্ট একটি প্রাকৃতিক চ্যানেল ব্যবহার করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয় বে টার্মিনাল। দেশের আগামীর একশ বছরের চাহিদা মেটানোর উপযোগী করে বন্দরটি গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়।
প্রকল্পটিকে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত মেগা প্রকল্প হিসেবেও তালিকাভুক্ত করা হয়। প্রাকৃতিকভাবে জেগে উঠা চ্যানেলটিকে কেন্দ্র করে সর্বমোট ৯৩৯ একর ভূমিতে বে টার্মিনাল নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করা হবে। কিন্তু বে টার্মিনালের প্রয়োজনীয় ভূমির মাত্র ৬৮ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি বন্দর কর্তৃপক্ষ কিনে নিতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত বাকি ৮৭১ একর খাস জায়গা বরাদ্দ পাওয়ার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নানা আনুষ্ঠানিকতা এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সরকারের এই খাস জমিটি বন্দর কর্তৃপক্ষ বুঝে নিতে পারেনি। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সিদ্ধান্ত হওয়ার পরও নানা জটিলতায় ভূমি বরাদ্দের ব্যাপারটি ঝুলে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে উক্ত খাস জায়গা বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তরের ব্যবস্থা করতে ভূমি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছে, ভূমিমন্ত্রী নিজেও এই জায়গা যত দ্রুত সম্ভব বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করতে চান। কিন্তু এরপরও নানা জটিলতা লেগে রয়েছে। ফলে জায়গা না পাওয়ায় বে টার্মিনাল নির্মাণের কার্যক্রম ইতোমধ্যে কিনে নেয়া ৬৮ একর ভূমির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
সূত্র বলেছে যে, শুরুতে ৯৩৯ একর ভূমিতে নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করা হলেও পরবর্তীতে এই বন্দরের এলাকা আড়াই হাজার একরে উন্নীত হবে। ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ করে সাগর থেকে ভূমি তুলে নেয়ারও (ল্যান্ড রিক্লেম) উদ্যোগ নেয়া হবে।
বে টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের জন্য কোরিয়ার কুনওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনসালটিং কোম্পানি লিমিটেড এবং ডিয়েনইয়াং ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডকে যৌথভাবে পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ১২৬ কোটি ৪৯ লাখ ৭৩ হাজার ৯৮৬ টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠানটি বে টার্মিনালের ডিজাইন ড্রয়িং থেকে শুরু করে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করবে। কিন্তু জায়গার ব্যাপারে কোন সুরাহা না হওয়ায় পুরো আয়োজনই থমকে আছে। জমি বরাদ্দের ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সরকার এই প্রকল্পটির ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্পটির ব্যাপারে খোঁজখবর রাখেন। এটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত একটি প্রকল্প। তবে জায়গা নিয়ে টুকটাক কিছু সমস্যা রয়েছে। এগুলো দ্রুত সমাধান হয়ে গেলে আমরা পুরোদমে নির্মাণ কাজ শুরু করবো। তিনি বে টার্মিনালের জন্য ইতোমধ্যে বুঝে পাওয়া জমিতে উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে বলেও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বে টার্মিনাল আমাদের উন্নয়ন এবং অগ্রগতির সহায়ক হয়ে সার্বিক অর্থনীতিতে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম চলে সাড়ে চারশ’ একর ভূমিতে। এতে করে বে টার্মিনাল চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে পাঁচ গুণেরও বেশি বড় এলাকায় পরিচালিত হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে সর্বোচ্চ ১০ মিটারে ড্রাফট এবং ২০০ মিটার ল্যান্থের জাহাজ বার্থিং নিতে পারে। বে টার্মিনালে কমপক্ষে ১২ মিটার ড্রাফটের ২৭০ থেকে ২৮০ মিটার ল্যান্থের জাহাজ ভেড়ানো যাবে। বে টার্মিনালে মোট তিনটি টার্মিনাল থাকবে। প্রতিটি টার্মিনালে ৩০০ মিটার লম্বা ছয়টি জেটি থাকবে। অর্থাৎ একটি টার্মিনালে ১৮শ মিটার লম্বা জেটি এবং পশ্চাদসুবিধা গড়ে তোলা হবে। প্রতিটি টার্মিনালে একই সাথে ছয়টি জাহাজ বার্থিং দেয়া যাবে বলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ২০২৪ সালে বে টার্মিনালে জাহাজ ভিড়ানোর আশাবাদ ব্যক্ত করা হলেও ভূমি প্রাপ্তিতে বিলম্বের কারণে এই লক্ষ্য অর্জন কতটুকু সম্ভব হবে তা নিয়ে সংশয় ব্যক্ত করা হয়েছে।