চট্টগ্রামে হঠাৎ করে বেড়ে গেল ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য

 

 

পুলক খাস্তগীর মোহন

নগরীতে হঠাৎ করেই বেড়েছে ছিনতাই চক্রের দৌরাত্ম। ছিনতাইপ্রবণ বিভিন্ন স্পটে প্রকাশ্য দিবালোকে তাদের অপতৎপরতা চলছে। চলতি পথে ভিড়ের মধ্যে কিংবা যানবাহনে উঠার সময় ছোঁ মেরে নাগরিকদের কাছ থেকে মোবাইলসহ মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নিয়ে কেটে পড়ছে ছিনতাইকারীরা। প্রায় প্রতিদিনই নগরীর থানাগুলোতে মোবাইল হারানোর জিডি এন্ট্রি হলেও মূলত সেগুলো খোয়া যাচ্ছে ছিনতাইচক্রের হাতে। ছিনতাইকারীর শিকার হলেও অধিকাংশ নাগরিক থানায় অভিযোগ করার আগ্রহবোধ করেন না।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের সামনে দিয়ে হাজারী লেনের বাসায় ফিরছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা শিখা রাণী দাশ। ফুটপাতের হকারের ভিড়ের মধ্যে হঠাৎ করেই পেছন থেকে তার গলার চেনটি হেঁচকা টান দিয়ে নিয়ে চলে যায় কে বা কারা। গত কয়েক মাসে কোতোয়ালী থানার নিউমার্কেট মোড় থেকে চট্টগ্রামের সিরাজউদ্দৌলা রোডের দিদার মার্কেট পর্যন্ত সোয়া দুই কিলোমিটার এলাকায় একডজনেরও বেশি মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় জিডি হলেও পুলিশ লুণ্ঠিত মোবাইল জব্দ করতে পারেনি। তবে গত বছরের শেষ দিকে কোতোয়ালী ও ডিবি পুলিশের একাধিক অভিযানে স্টেশন রোডের ‘চোরা মার্কেট’ থেকে বেশকিছু চোরাই মোবাইল ফোনসেটসহ ছিনতাইচক্রের কয়েক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

 

সিরাজউদ্দৌল্লা রোডের বাসিন্দা ও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. সাইমন চৌধুরী চট্টলার কণ্ঠকে  জানান, নিউমার্কেট থেকে কেনাকাটা সেরে গাড়িতে উঠার সময় তার ছোট বোনের হাত থেকে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায় অজ্ঞাত ছিনতাইকারী। এ নিয়ে কোতোয়ালী থানায় জিডি করা হয়। ঘটনার পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও পুলিশ লুণ্ঠিত মোবাইল ফোনের কোনও সুরাহা করতে পারেনি।

 

নগরীর ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন  কেবল এই এলাকাই নয় নগরীর জনসমাগমের বিভিন্ন স্থানে ছিনতাইকারী দলের সদস্যদের অপতৎপরতা হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। প্রায় সব এলাকায় সড়কে রয়েছে কমবেশি ভাসমান হকার। ছিনতাইকারী অপরাধ সংঘটিত করে নিমিষেই সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশে যাচ্ছে।
সিটি কর্পোরেশনের আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী চট্টলার কণ্ঠকে বলেন, সাম্প্রতিক দিদার মার্কেট থেকে নিউমার্কেট মোড় পর্যন্ত কয়েকটি স্পটে ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া নাগরিকদের অনেকেই ঘটনার ব্যাপারে আমাকে জানিয়েছেন। আমি তাদেরকে থানায় জিডি করার পরামর্শ দিয়ে সাধ্যমত সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি। কিন্তু কাজটা তো আসলে পুলিশের। আমরা সহযোগিতা করতে পারি মাত্র। এ নিয়ে খুব বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে।
সিএমপি’র দক্ষিণ জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) নোবেল চাকমা বলেন, থানায় প্রায়ই মোবাইল খোয়ানোর অভিযোগ আসে- এটা মিথ্যা নয়। তবে গত দু’মাসের মধ্যে পুলিশ টাইগারপাস ও স্টেশন রোডসহ আশপাশের এলাকায় ছিনতাইচক্রের বিরুদ্ধে পরিচালিত একাধিক অভিযানে সাফল্য পেয়েছে। এসময় ছিনতাইকারী দলের বেশ ক’জন সদস্যকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি শতাধিক চোরাই মোবাইলও জব্দ করা হয়েছে। কারাগারে যাওয়া ছিনতাইকারীরা জামিনে এসে ফের অপরাধে জড়াতে পারে। আমরা সেদিকে নজরদারি বাড়িয়ে দিচ্ছি।

 

 

পুলিশের সর্বশেষ তৈরি করা তালিকায় নগরীর টাইগারপাস মোড়, জামালখান মোড়, খাস্তগীর স্কুলের সামনের অংশ, ডিসিহিল-বৌদ্ধমন্দির মোড়, গণি বেকারির পশ্চিম পাশ এলাকা, চট্টগ্রাম কলেজের পূর্ব গেট (প্যারেড কর্নার) মাদারবাড়ি, নালাপাড়া মোড়, মাঝিরঘাট, চন্দনপুরা, বহদ্দারহাট মোড়, নজির আহমদ চৌধুরী রোড, লালখান বাজার মোড়, নন্দনকানন কাটা পাহাড় এলাকা, বাদামতলী মোড়, বড়পুল, বারিক বিল্ডিং মোড়, মনছুরাবাদ ঈদগাঁ মোড়, টিএন্ডটি কলোনি মোড়, সার্সন রোড, বাদশা মিয়া চৌধুরী সড়ক, কাজীর দেউড়ি, লাভলেন, মাস্টারপুল, সিরাজউদ্দৌল্লা রোডের সাব-এরিয়া, খাতুনগঞ্জ পোস্ট অফিস গলি, বক্সিরহাট, আন্দরকিল্লা, নিউ মার্কেট মোড়, বটতলী রেলস্টশন, কদমতলী মোড়, চৌমুহনী, মহসিন কলেজ এলাকা, সিটি কলেজ মোড়, শুভপুর বাস স্টেশন, হাওয়াই হোটেল গলি মুখ, আগ্রাবাদ সোনালী ব্যাংক মোড়, বনানী কমপ্লেক্সের সামনে, ঢেবারগলি, উপহার সিনেমার সামনে, জিইসির মোড়, সিনেমা প্যালেস, আশরাফ আলী রোড, ফিশারিঘাট, আছদগঞ্জ, এমইএস কলেজ মোড়, প্রবর্তক মোড়, আসকার দীঘির পূর্বপাড়, রহমতগঞ্জ, চাক্তাই-রাজাখালী, আমবাগান, ষোলশহর দুই নম্বর গেট, বলুয়ারদীঘির পশ্চিম পাড়, মিয়াখান নগর, ইকবাল রোড, পাহাড়তলী বাজার, পানির কল, পোর্ট কানেকটিং রোড, ফকিরহাট ৩ নম্বর জেটি গেট, সল্টগোলা রেলক্রসিং, কর্নেল হাট, কাঠগড়, পতেঙ্গা সি বিচ, ফিরোজশাহ কলোনি রাস্তার মোড়, শেরশাহ শহীদ মিনার, রৌফাবাদ কলোনি, হামজারবাগ মোড়, মেডিক্যাল স্টাফ কোয়ার্টারের সামনে, গোল পাহাড়ের মোড়, ধনিয়ালাপাড়া, বাকলিয়া বগারবিল, ঝাউতলা, চাঁদনী সিনেমা হল, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার মোড়, ট্যানারি মোড়, বড়ুয়াপাড়া গলির মুখ, ওসমানিয়া গ্লাস ফ্যাক্টরি মোড়, এফআইডিসি রোড, কেডিএস ফ্যাক্টরি গেট, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিস অফিসের সামনে, আমিন জুটমিল ও বিবিরহাট মোড় এলাকার অপেক্ষাকৃত নির্জন স্থানগুলো সবচেয়ে বেশি ছিনতাইপ্রবণ স্পট হিসেবে উল্লেখ রয়েছে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক