গতকাল সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪১তম সিন্ডিকেট সভা শুরু হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক একাকার উপগ্রুপের পছন্দের শিক্ষক প্রার্থী ছাত্রলীগ নেতাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দেয়ায় একাকারের নেতাকর্মীরা ভাঙচুর চালান। এর আগে সকাল থেকে প্রশাসনিক ভবনের আশেপাশে ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের নেতাদের অবস্থান করতে দেখা যায়। এর আগেও নানা সময় নিজেদের পছন্দের সিদ্ধান্ত না হওয়ায় উপাচার্যের দপ্তর ও প্রশাসনিক ভবনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। জানা যায়, গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এজেন্ডা নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সভাকক্ষে ৫৪১তম সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় রাজনীতি বিজ্ঞান, মেরিন সায়েন্স, ওশানোগ্রাফি ও গণিত বিভাগে কয়েকজন শিক্ষককে নিয়োগ দেয়া হয়। এর মধ্যে মেরিন সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক প্রার্থী ছিলেন ওশানোগ্রাফি বিভাগের ২০১৩–১৪ সেশনের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাইয়ান আহমেদ। তাকে নিয়োগ না দিয়ে অন্য কাউকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে শাখা ছাত্রলীগের একাকার গ্রুপের নেতাকর্মীরা উপাচার্যের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান। পরে বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন থেকে শহরগামী বিকেল সাড়ে ৫টার ট্রেনও আটকে দেন তারা।
উপাচার্যের কক্ষ ভাঙচুরের বিষয়টি স্বীকার করে একাকার গ্রুপের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মইনুল ইসলাম রাসেল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স বিভাগে আমাদের গ্রুপের এক কর্মী শিক্ষকের জন্য আবেদন করেছিল। সে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত মেধাবী শিক্ষার্থী। কিন্তু প্রশাসন তাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দিয়ে জামায়াত–শিবির, কোটা আন্দোলনকারী, সরকারবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত কয়েকজনকে নিয়োগের সুপারিশ করেছে। এর প্রতিবাদে আমাদের কর্মীরা উপাচার্যের কক্ষে ভাঙচুর এবং শাটল ট্রেন অবরোধ করে।
তিনি বলেন, আমাদের প্রথম দাবি, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড ও জামায়াত শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িতদের শিক্ষক থেকে বাদ দিতে হবে। আর দ্বিতীয় দাবি হলো, ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী রাইয়ান আহমেদকে মেরিন সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া বলেন, যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। শাটল ট্রেন অবরোধের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি জেনেছি। তাদের সাথে আমরা কথা বলার চেষ্টা করছি।
শাটল ট্রেনে তিন ঘণ্টা দেরি : বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস মূল শহর থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম শাটল ট্রেন। কিন্তু হঠাৎ অবরোধে বিড়ম্বনায় পড়েন শিক্ষার্থীরা। শুরুতে ট্রেন অবরোধের কারণও শিক্ষার্থীরা জানতে পারেননি। পরে ভোগান্তির শিকার হয়ে কয়েকশ শিক্ষার্থী বাস ও সিএনজি টেঙিতে করে শহরের দিকে যাত্রা করেন।
তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন বলেন, আজকে শহরে আমার টিউশন ছিল। অবরোধের কারণে টিউশন মিস হয়ে গেছে। শিক্ষাঙ্গনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কিছু হলেই ছাত্রলীগ আন্দোলনের নামে শাটল বন্ধ করে দেয়। আগামীকাল আমার পরীক্ষা। কিন্তু এখনো বাসায় যেতে পারিনি।
চবি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল চট্টলার কণ্ঠকে বলেন, আন্দোলনের নামে শিক্ষার্থীদের হয়রানি করার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি। ছাত্রলীগের নাম দিয়ে যারা এসব করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। ক্যাম্পাসে বগিভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ। কেউ বগির নাম ব্যবহার করে ছাত্রলীগের নাম নষ্ট করলে সেটার দায় ছাত্রলীগ নেবে না।
কার্যালয়ে ভাঙচুরের বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতারকে ফোন করে বক্তব্য নিতে চাইলে তিনি খুব ব্যস্ত আছে আছে বলে লাইন কেটে দেন।