সড়কের পাশে মাত্র ৫ মিনিট দাঁড়ালে চেহারা পাল্টে যাবে। নিজেকে চেনা কষ্টকর হবে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকালীন দুর্ভোগ এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, শহরের প্রধান সড়ক হিসেবে বিবেচিত বিমানবন্দর সড়ক ধরে পথ চলা কঠিন হয়ে উঠেছে। বারিক বিল্ডিং, বন্দর, সল্টগোলা ক্রসিং, দেওয়ানহাট, টাইগারপাসসহ বিভিন্ন এলাকার অবস্থা শোচনীয়। খানাখন্দে ভরা রাস্তাটির বাড়তি আপদ ধুলো। চারপাশ অন্ধকার করে রাতে–দিনে ধুলো ওড়ে।
শহরের ব্যস্ততম এলাকায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটিতে জনভোগান্তি হ্রাসের চেষ্টা দৃশ্যমান নয়। রাস্তায় চার লেনের গাড়ি চলাচল নিশ্চিত করার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। যতটুকু রাস্তা রয়েছে তা খানাখন্দে ভরা। আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোডের কিছু অংশে রাস্তা ঠিক করা হলেও বেশিরভাগ অংশে বেহাল অবস্থা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সের রাস্তাটি ঠিক করে দেয়ার কথা থাকলেও নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাই সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে।
সূত্রে জানা যায়, নগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সন্নিকটস্থ টানেল রোড পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ চলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক্সপ্রেসওয়ে শহরের যান চলাচলে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে যাতায়াত করা যাবে এয়ারপোর্ট বা পতেঙ্গার শিল্পাঞ্চলে।
শহরের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তনের লক্ষ্যে চার হাজার কোটির বেশি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে প্রকল্পটি। পাঁচ ভাগে ভাগ করে নির্মাণের কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে লালখান বাজার–বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত প্রথম ধাপ, বারিক বিল্ডিং–সল্টগোলা ক্রসিং দ্বিতীয় ধাপ, সল্টগোলা ক্রসিং থেকে সিমেন্ট ক্রসিং তৃতীয় ধাপ, সিমেন্ট ক্রসিং থেকে কাঠগড় চতুর্থ ধাপ এবং কাঠগড় থেকে পতেঙ্গার ল্যান্ডিং পয়েন্ট পর্যন্ত পঞ্চম ধাপ চিহ্নিত করে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। প্রকল্পের বেশিরভাগ কাজ শেষ করা হয়েছে। কিছু জটিলতার কারণে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন করা যায়নি। বর্তমানে কোনো কোনো এলাকায় কাজ শেষ হয়েছে। উপরে রাস্তা বানানোর কাজ চলছে। কোনো এলাকায় গার্ডার বসানো হচ্ছে, কোনো এলাকায় পিলার তৈরির কাজ চলছে। লালখান বাজার ও ওয়াসা মোড় এলাকায় পাইলিং করা হচ্ছে।
শহরের ভিতরে কাজ, তাই নগর পুলিশের পক্ষ থেকে বেশ কিছু শর্ত দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে অন্যতম শর্ত ছিল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য সড়কের মাঝখানে যে পরিমাণ এলাকা ঘেরা হবে তার দুই পাশে বিশ ফুট করে দুই লেনে গাড়ি চলাচলের রাস্তা নিশ্চিত করতে হবে। এই শর্ত মেনেই নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ঘেরা দেয়া অংশের দুই পাশে চার লেনের গাড়ি চলাচল নিশ্চিত করার কথা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স রেনকিং জেবি লিমিটেডের। তবে সব জায়গায় চার লেনের করা হয়নি।
এদিকে আগ্রাবাদ এলাকার কিছু অংশ বাদ দিলে রাস্তাটির বারিক বিল্ডিং, বন্দর, দেওয়ানহাট, টাইগারপাসসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার অবস্থা বেহাল। পিচ নষ্ট হয়ে সৃষ্টি হয়েছে শত শত খানাখন্দ। কোথাও কোথাও জমে রয়েছে পানি।
স্থানীয়রা বলছেন, কোনো কোনো অংশে এত বেশি ধুলোবালি উড়ছে যে, চারপাশ অন্ধকার হয়ে থাকে। ধুলোবালির কারণে তাদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বাসাবাড়ি বা দোকানপাটের জিনিসপত্র ধুলোময়। সারাদিন ধুলো ওড়ে। রাস্তার পাশে পাঁচ মিনিট দাঁড়ালে কিংবা বাস, রিকশা, টেক্সি ও টেম্পোযোগে এলাকায় গেলে নিজেকে চিনতে কষ্ট হয়। ধুলোয় শরীর ঢেকে যায়।
অভিযোগ আছে, রাস্তাটি ঠিক রাখার দায়িত্ব ম্যাক্স রেনকিংয়ের হলেও তারা এই ব্যাপারে উদাসীনতা দেখাচ্ছে। মাসের পর মাস শহরের প্রধান এই রাস্তাটির এমন বেহাল অবস্থা। সামনে বর্ষা আসছে। সড়কটির অবস্থা গতবারের মতো হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
নগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা রাস্তাটি নিয়ে অশান্তিতে আছি। ট্রাফিক পুলিশ ডিউটি করতে চায় না। পাঁচ মিনিট দাঁড়ালে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে চায়। শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটিতে দিনের বেশিরভাগ সময় যানজট লেগে থাকে। যানজটে আটকা পড়া মানুষ অসহায়ভাবে ধুলোবালির কবলে পড়ে। তিনি বলেন, রাস্তাটিতে নিয়মিত পানি ছিটানোর কথা থাকলেও তা করা হয় না। আমরা দফায় দফায় বলেও জনদুর্ভোগ কমাতে পারছি না।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে অসন্তোষ রয়েছে জানিয়ে স্থানীয় হাকিম ম্যানসনের একজন ব্যবসায়ী বলেন, ভয়াবহ অবস্থা। এভাবে একটি শহর চলতে পারে না। কখন এই দুর্ভোগ থেকে নিস্তার পাব তার কাউন্টডাউন করছি।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বড় প্রকল্প। এত বড় একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছু সমস্যা তো হবে। মানুষের দুর্ভোগও হচ্ছে। তবে জনদুর্ভোগ যতটুকু সম্ভব কমানোর জন্য আমাদের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশও দিয়ে রাখা হয়েছে। ম্যাক্সের পক্ষ থেকে রাস্তায় কার্পেটিংসহ বেশ কিছু কাজ করে দেয়া হয়েছে। আরো কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু নানা প্রতিকূলতায় কিছু কিছু কাজ করা সম্ভব হয়নি। মানুষের দুর্ভোগ যাতে আরো কমানো যায় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা