ইমরান নাজির, চট্টলার কণ্ঠ।
চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরে ছুরিকাঘাতে আজাদুর রহমান নামে যুবক হত্যায় স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবদুল মান্নান খোকনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তার বাসায় বসে আজাদকে হত্যার পরিকল্পনা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। গত রবিবার খুলনার পাইকগাছা থেকে এই হত্যা মামলার দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য পেয়েছে ডিবি। এরপর খোকনের বাসায় অভিযান চালানো হয়। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি।
আব্দুল মান্নান খোকন ২৫ নম্বর রামপুর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুস সবুর লিটনের ছোট ভাই। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ছোটভাই হওয়ার সুবাদে তিনি কিশোর গ্যাং লিডার হয়ে এলাকায় চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করেন। এ হত্যাকান্ডের পর থেকেই স্থানীয়রা অভিযোগ করে আসছিলেন, জড়িতরা কাউন্সিলর ও তার ভাইয়ের অনুসারী। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন আবুল হাসনাত রাজু (৩৪) ও ওসমান (৩৫)। বিষয়টি নিশ্চিত করে গোয়েন্দা পুলিশের (বন্দর ও পশ্চিম) উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আলী হোসেন জানান, দমামলার তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর পলাতক আসামিদের ধরতে অভিযানে নামি। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত রবিবার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় খুলনা জেলার পাইকগাছা থানার শোলাদানা এলাকা থেকে হত্যার দুই মূলহোতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দুইটি ছোরা জব্দ করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আজাদের সাথে স্থানীয় নয়াবাজার বিশ্বরোড এলাকার চাঁদা আদায়ের বিষয় নিয়ে গ্রেপ্তার আবুল হাসনাত রাজু এবং ওসমানের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৭ মে ভোর সাড়ে ৪টায় আজাদের বাসার গলির সামনে নয়াবাজার রোডে আবুল হাসনাত রাজু এবং ওসমান তাদের অপর সহযোগীদের নিয়ে আজাদকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে হত্যা করে।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ মে রাতে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি নগরীর নয়াবাজার এলাকার একটি কারখানার গেটের সামনে প্রস্রাব করছিল। কারখানার নৈশপ্রহরী মফিজ তাকে বাধা দেন। এতে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আবু তাহের রাজীব, ওসমান, আবুল হাসান এবং অজ্ঞাত আসামিরা এসে কথা কাটাকাটিতে লিপ্ত হয়। বড় ভাই মফিজের সঙ্গে কথা কাটাকাটির শব্দ শুনে ভিকটিম আজাদুর রহমান ঘটনাস্থলে গেলে তার সঙ্গেও কথা কাটাকাটি এবং ধাক্কাধাক্কি হয়। এ সময় আসামিরা ভিকটিমকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়। এ ঘটনার জের ধরে তার পরদিন (২৮ মে) ভোরে আজাদুর রহমান দোকান থেকে নাশতা আনার জন্য বাসা থেকে বের হন। পথে পাহাড়তলী থানার নয়াবাজারে ওঁৎ পেতে থাকা আসামিরা পরিকল্পিতভাবে ভিকটিমকে একা পেয়ে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে আহত অবস্থায় আজাদ তার ভাতিজা তারেকুর রহমানের কাছে তার ওপর আক্রমণকারীদের নাম প্রকাশ করেন। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আসামিরা তাকে ছুরিকাঘাত করেছে বলে জানায়। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে পাহাড়তলী থানায় ৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও তিন-চার জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। সোমবার (২৯ মে) ভোরে রাঙামাটি জেলার কোতোয়ালী থানাধীন একটি আবাসিক হোটেলে এবং নগরীর কদমতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।