এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলো কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির চট্টলার কণ্ঠকে জানান, গ্রেপ্তার পাঁচজনই যুবদলের কর্মী। আজ (বুধবার) কাজীর দেউড়িতে বিএনপির ডাকা ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ যোগদানের উদ্দেশ্যে চান্দগাঁও ও বাকলিয়া এলাকার নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে মিছিল করে আসার পথে চট্টগ্রাম কলেজের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উপর অতর্কিতে হামলা করে। পরে একই মিছিল কাজীর দেউড়ি পর্যন্ত আসার পথে স্থানে স্থানে ভাঙচুর করে। উক্ত বিষয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে চান্দগাঁও থানা যুবদল ও বাকলিয়া থানা ছাত্রদল চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের সামনে দিয়ে মিছিল নিয়ে কাজীর দেউড়ির মোড়ের দিকে যাচ্ছিলেন। আগে থেকেই চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ কলেজের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়েছিল। যুবদল–ছাত্রদলের মিছিল কলেজের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে স্লোগান দেয়। পাল্টাপাল্টি স্লোগানে উভয়পক্ষে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এতে কেউ আহত না হলেও দুই পক্ষকে লাঠিসোটা নিয়ে শোডাউন দিতে দেখা যায়।
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুর কাদের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে চট্টলার কণ্ঠকে বলেন, বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সকাল থেকেই দলটির নেতাকর্মীরা কাজীর দেউড়ি এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। দুপুরের দিকে দলটির নেতাকর্মীরা কলেজ এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। স্লোগানকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যুবদল–ছাত্রদলের ব্যানার নিয়ে মিছিল করে যাওয়ার সময় জামালখানে সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, সেন্টমেরিস স্কুল এবং ডা. খাস্তগীর সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের দেয়ালে স্থাপিত বিভিন্ন দেয়াল চিত্রে ইট, পাথর, লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। এতে কাঁচের তৈরি কয়েকটি দেয়াল চিত্র ভেঙে গুঁড়ো হয়ে নিচে পড়ে যায়। বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত বিভিন্ন ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয়। দেখা গেছে, জামালখান মোড়ে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজের আওতায় স্থাপিত নকশা করা নৌকাসহ আরও বিভিন্ন স্থাপনা ভাংচুর করা হয়। সড়ক বিভাজকে কয়েকটি ছোট লাইটপোস্টও ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভাংচুর চলাকালে জামালখান থেকে আসকার দীঘির পাড় হয়ে কাজীর দেউড়িতে সমাবেশস্থলের আগ পর্যন্ত এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়। সড়কে যানবাহন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জামালখান এলাকার আইডিয়াল স্কুলের পর থেকে ‘মুজিব মানে বাংলাদেশ’ নামে দেওয়ালে সাঁটানো বঙ্গবন্ধুর সব দেয়াল চিত্র ভেঙে ফেলা হয়েছে। শেখ রাসেল পাঠাগার পর্যন্ত এ ভাঙচুর করা হয়। এছাড়া দেয়াল থেকে তুলে নিয়ে ছিঁড়ে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়েছে। ওয়াকওয়ে জুড়ে পড়ে ছিল ভাঙা কাঁচ ও বঙ্গবন্ধুর ছবি। সড়কের ডিভাইডারে লাগানো আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকার একটি ম্যুরালও ভাঙচুরের চেষ্টা করা হয়েছে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ আসে ঘটনাস্থলে এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ঘটনার সময় পাশের সেন্ট মেরিস স্কুল ছুটি হওয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসময় রাস্তায় যান চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।
স্কুলে আসা শাহনাজ নামে এক অভিভাবক বলেন, ছেলের জন্য স্কুলের গেটে অপেক্ষা করছিলাম। এ সময়ে একদল যুবক স্লোগান দিতে দিতে মিছিল নিয়ে এসে দেয়ালে লাগানো সব গ্লাস ভাঙা শুরু করে। পরে তারা কাজীর দেউড়ির দিকে চলে যায়।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন চট্টলার কণ্ঠকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে খাস্তগীর স্কুলের দেয়ালে আমরা জাতির পিতার শৈশব থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ইতিহাস উল্লেখ করে ৫০টি গ্লাসে দেয়াল চিত্র স্থাপন করেছিলাম। বঙ্গবন্ধুর ও কয়েকটি ছিল। সবগুলোই যুবদল–ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা ভেঙ্গে দিয়েছে। সেন্টমেরিস স্কুলের দেয়ালে বরেণ্য মনীষীদের ছবি ছিল। সেগুলোতে আঘাত করা হয়েছে। তবে পুরোপুরি ভাঙতে পারেনি। নান্দনিক জামালখান গড়ার অংশ হিসেবে বেশকিছু স্থাপনা আমরা করেছিলাম। সেগুলো ভেঙে দিয়েছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই্ এটা নোংরামি এবং অপরাজনীতি।