সীতাকুণ্ডে আল আমানত বহুমুখী সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের ১১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠেছে। আমানতের টাকা আংশিক ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সময়ক্ষেপণ করার প্রতিবাদে ভুক্তভোগী শতাধিক গ্রাহক গতকাল বুধবার সকালে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. শহীদ ভুঁইয়াকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। পরে সীতাকুণ্ডের ইউএনও বিক্ষোভকারীদের সাথে আলোচনায় বসেন। উপজেলা হল রুমে সমঝোতায় বসে সমিতির সভাপতির নামে দুই ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবে থাকা ১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা তুলে গ্রাহকদের দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। গ্রাহকদের টাকা উদ্ধার করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
আমানতকারী মমতাজ বেগম ও রেহেনা আক্তার চট্রলার কণ্ঠকে বলেন, আমাদের আমানত উদ্ধারে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিই। আমানতকারীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি কয়েকদফা আল আমানত বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মোশারফের সাথে বৈঠক করে। বৈঠকের পরে ব্র্যাক ব্যাংকে থাকা ৮৯ লাখ টাকা তুলে কিছু আমানতকারীদের মাঝে বণ্টনও করেন এবং ধাপে ধাপে আরো টাকা বণ্টন করারও আশ্বাস দেন। কিন্তু সমবায় কর্মকর্তা ইচ্ছাকৃতভাবে সময়ক্ষেপণ করে টাকা দিতে গড়িমসি করছেন। যার কারণে আমরা সমবায় অফিস ঘেরাও ও বিক্ষোভ করতে বাধ্য হই।
সীতাকুণ্ড উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. শহীদ ভুঁইয়া জানান, সমিতির নামে কেউ আমানতের টাকা আত্মসাৎ করলে তার দায় নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। এটি আইনি প্রক্রিয়ায় উদ্ধার হবে। যেহেতু ওই সমিতির নিবন্ধন রয়েছে সে কারণে পূবালী ব্যাংকে ও এবি ব্যাংকে থাকা ১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা নিয়ম মোতাবেক তুলে সদস্যদের বণ্টন করার উদ্যোগে নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকে থাকা ৮৯ লাখ টাকা তুলে আমানতকারীদের মাঝে বণ্টন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
জানা যায়, মো. মুছা মিয়া নামে একজন ২০০২ সালে আল আমানত বহুমুখী সমবায় সমিতি নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠান করেন। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে উপজেলা সমবায় অধিদপ্তর থেকে সমিতিটির নিবন্ধন নেন তিনি। নিবন্ধন নিয়েই সমিতিটি বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষকে ১০, ৫ ও ৩ বছর মেয়াদ শেষে জমাকৃত টাকার মুনাফা ও আসলে দ্বিগুণ ফেরত দেয়া হবে জানিয়ে নানা লোভনীয় প্রস্তাব দিতে থাকেন। আর এ ফাঁদে পা দিয়ে অসংখ্য গ্রাহক তাদের মোটা অঙ্কের অর্থ লগ্নি করতে থাকেন আল আমানত সমিতিতে। ২০১৭ সালে সমিতির মূল প্রতিষ্ঠাতা মো. মুছা মিয়ার স্ট্রোকে মৃত্যু হয়। এরপর তার স্ত্রী রুবিনা ইয়াসমিন সমিতির দায়িত্ব নেন। তিনিও ২০২০ সালে আত্মহত্যা করেন। তার মৃত্যুর পর সমিতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন মুছা মিয়ার বড় ছেলে মোশাররফ হোসেন (১৮)। তবে তিনিও গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হন। দীর্ঘদিন ধরে সেও গা ঢাকা দেয়। তবে সমিতির সদস্যরা দাবি করছেন মোশারফ হোসেন বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন।
প্রতারণার শিকার সৈয়দপুর ইউনিয়নের বগাচতরের বাসিন্দা মৌসুমী আক্তার বলেন, আমাদের ৯ সদস্য আল আমানতে সঞ্চয় করেছি। বর্তমানে এ সমিতির কাছে আমাদের পরিবারের সাড়ে ৩ লাখ টাকা জমা রয়েছে। এছাড়াও আমাদের এলাকায় এ সমিতির ২২ জন সদস্য যাদের অন্তত ১২ লাখ টাকা সমিতিতে জমা আছে। তারা কেউ টাকা ফেরত পায়নি।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, সমিতির সদস্যরা টাকাগুলো সমিতির সভাপতিকে দিয়েছিল। পরবর্তীতে সে মারা যায়। কিন্তু তিনি ওই টাকা সমিতির ব্যাংক হিসাবে জমা না করে নিজের ব্যাংক হিসাবে রেখেছে। মূলত টাকাগুলো আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে তার ছেলে সভাপতির দায়িত্বে থাকলেও পলাতক রয়েছে। তবে গ্রাহকদের সাথে আলোচনা করে পূবালী ব্যাংকে ৬৫ লাখ ও এবি ব্যাংকে জমা থাকা ৫৬ লাখ টাকা নিয়ম মোতাবেক তুলে তাদের সমতার ভিক্তিতে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সমিতির সদস্যদের মনোনীত প্রতিনিধির যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।