ডিসেম্বর ৮, ২০২৪ ২:২৬ অপরাহ্ণ

ছাত্রাবাসে অবৈধভাবে থাকা তিন ছাত্রলীগ নেতার কক্ষ সীলগালা

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) ছাত্রাবাসে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে থাকা তিন ছাত্রলীগ নেতার কক্ষ সিলগালা করে দিয়েছে কলেজ প্রশাসন। এর আগে কক্ষ থেকে তাদের যাবতীয় মালপত্র বের করে দেয়া হয়। গতকাল বুধবার দুপুরে চকবাজার থানা পুলিশের সহায়তায় অভিযান চালিয়ে চমেক প্রশাসন এ কক্ষগুলো সিলগালা করে। চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর শাহেনা আক্তার আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অভিযানের সময় আসেফ বিন তাকি নামে এক ছাত্রলীগ নেতা কক্ষে অবস্থান করছিলেন। মালপত্রসহ তাকে কক্ষ থেকে বের করে দেয়া হয়। আসেফ এমবিবিএস ৫৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং বর্তমানে ইন্টার্ন ডক্টরস এসোসিয়েশনের (আইডিএ) সভাপতি। তিনি সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। নিয়মানুযায়ী ইন্টার্নশিপ শুরুর পর গত নভেম্বর থেকে তার ইন্টার্ন হোস্টেলে চলে যাওয়ার কথা। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষের দফায় দফায় নোটিশ এবং তাগাদার পরও তিনি প্রধান ছাত্রাবাস ছাড়েননি। ৮ মাস ধরে প্রধান ছাত্রাবাসের ২য় তলার ১২ (বি) কক্ষটি অবৈধভাবে দখল করে থাকছিলেন তাকি। অবশেষে গতকাল তাকে বের করে কক্ষটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। একই সাথে তিন তলার দুটি কক্ষও (১৭–এ এবং ২১–সি) সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। এ দুটি কক্ষ দখল করে অবৈধভাবে থাকছিলেন কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বহিষ্কৃত দুই শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ১৭ (এ) কক্ষটি দখল করে ছিলেন রিয়াজুল ইসলাম জয়। আর ২১ (সি) কক্ষটি দখলে রেখেছিলেন অভিজিৎ দাশ। তারা দুজনই এমবিবিএস ৫৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি চমেক প্রধান ছাত্রাবাসে শিবিরের তকমা দিয়ে চার শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হিসেবে ৭ জনের নাম উঠে আসে তদন্ত প্রতিবেদনে। এর ভিত্তিতে ১৬ মার্চ অনুষ্ঠিত কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় অভিযুক্ত ৭ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়। এর মধ্যে অভিজিৎ দাশকে তিন বছর এবং মো. রিয়াজুল ইসলাম জয়কে দুই বছরের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করা হয়। পাশাপাশি ক্যাম্পাস থেকেও বহিষ্কৃতদের অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়।

এর আগে ২০২১ সালের ২৯ ও ৩০ অক্টোবর চমেক ছাত্রাবাস ও ক্যাম্পাসে সংঘটিত ছাত্রলীগের দুগ্রুপের মারামারির ঘটনায় বিভিন্ন মেয়াদে ৩১ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে চমেক প্রশাসন। বহিষ্কৃতদের তালিকায় এই দুজনও ছিলেন। এর মাঝে অভিজিৎ দাশ দুই বছরের জন্য এবং মো. রিয়াজুল ইসলাম জয় দেড় বছরের জন্য বহিষ্কৃত হয়। বহিষ্কারের পর নিয়মানুসারে তাদের ছাত্রাবাসের কক্ষ বরাদ্দও বাতিল হয়ে যায়। তবে এরপরও তারা ছাত্রাবাসের কক্ষ ছাড়েননি। অবৈধভাবে ছাত্রাবাসে থাকাকালীন ফেব্রুয়ারিতে চার শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটান। এ ঘটনায় পরে দ্বিতীয় দফায় বহিষ্কার হন। ক্যাম্পাস থেকে তাদের অবাঞ্চিতও ঘোষণা করে কলেজ প্রশাসন। তবে প্রশাসনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে অবৈধভাবে তারা ছাত্রাবাসেই থাকছিলেন। ছাত্রাবাস থেকে তাদের বের করতে এর আগে বেশ কয়েক দফায় অভিযান চালায় কলেজ প্রশাসন। কিন্তু তারা ওই সময় কক্ষে থাকতেন না। গতকালও অভিযানের সময় তারা কক্ষে ছিলেন না। পরে সব মালপত্র বের করে কক্ষগুলো সিলগালা করে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর শাহেনা আক্তার চট্টলার কণ্ঠকে  বলেন, তারা অবৈধভাবে সেখানে থাকছিলেন। এর মধ্যে একজন ইন্টার্ন ডাক্তার। যখন ইন্টার্নশিপ শুরু হয় তখন কোনো ইন্টার্ন মেইন হোস্টেলে থাকতে পারে না। তাকে ইন্টার্ন হোস্টেলে চলে যেতে হয়। গত নভেম্বর থেকে আমরা কয়েক দফায় নোটিশ করেছি। সরেজমিনে গিয়ে বলে এসেছি। বেশ কয়বার আমাদের কাছ থেকে সময় নিয়েছে। কিন্তু এরপরও মেইন হোস্টেল ছাড়েনি। বুধবার (গতকাল) গিয়ে তাকে কক্ষে পাওয়া যায়। পরে সব মালপত্রসহ তাকে বের করে কক্ষটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে।

আর দুজন বহিষ্কৃতের বিষয়ে চমেক অধ্যক্ষ বলেন, বহিষ্কারের পর তাদের আর হোস্টেলে থাকার সুযোগ নেই। কিন্তু তারাও অবৈধভাবে হোস্টেলে থাকছিল। আমরা বেশ কয়বার তাদের ধরতে গিয়েছিলাম। কিন্তু পাইনি। এবারও তারা কক্ষে ছিল না। তবে এবার আমরা আর ছাড় দিইনি। সব মালপত্র বের করে দিয়ে কক্ষগুলো সিলগালা করে দিয়েছি।

অবৈধভাবে প্রধান ছাত্রাবাসে কক্ষ দখল করে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে গত সেপ্টেম্বর থেকেই ইন্টার্ন হোস্টেলে উঠেছেন বলে দাবি করেছেন ইন্টার্ন ডক্টর এসোসিয়েশনের সভাপতি আসেফ বিন তাকি। তার দাবি, তিনি রাজনীতি  করেন। পলিটিক্যাল সব ছেলেপুলে মেইন হোস্টেলে থাকেন। তিনিও সেখানে তাদের সঙ্গে আড্ডা মারেন। রাত হয়ে গেলে সেখানে থেকে যান। কিন্তু সেপ্টেম্বর থেকেই তিনি ইন্টার্ন হোস্টেলে উঠেছেন। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রধান ছাত্রাবাস থেকে বের করে দেয়ার পর গতকাল বিকেলেই ইন্টার্ন হোস্টেলে উঠেছেন আসেফ বিন তাকি। অবশ্য, তার ব্যাচের ইন্টার্নশিপও বর্তমানে প্রায় শেষের পথে। যদিও ইন্টার্ন হোস্টেলে নয়, তিনি পাঁচলাইশের একটি বাসায় উঠেছেন বলে দাবি আসেফ বিন তাকির।

এদিকে, কক্ষ সিলগালা করার পর বহিষ্কৃত ও অবৈধ কাউকে পরবর্তীতে প্রধান ছাত্রাবাসে দেখা গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে চিঠি দিয়েছে বলে চট্টলার কন্ঠকে নিশ্চিত করেছেন  চমেক কর্তৃপক্ষ। গতকাল বিকেলে এ সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হয়েছে। চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর সাহেনা আক্তার চিঠি প্রদানের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্তরাই চমেক প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করেন। বিশেষ করে জুনিয়রদের মাঝে কর্তৃত্ব দেখাতেই তারা মূল হোস্টেল ছাড়তে চান না।

চমেক ছাত্রলীগ দুটি ধারায় বিভক্ত। একটি গ্রুপ সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের এবং অপরটি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তবে কলেজ প্রশাসনের নির্দেশনা না মানাদের মধ্যে দুই গ্রুপের নেতা–কর্মীরাই রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক