রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমদানি করা কয়লা নৌপথে পরিবহনের লক্ষ্যে ১২২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয় করে খনন করা হয় মোংলার পশুর চ্যানেল। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু না হওয়ায় খনন করা চ্যানেলের পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে যে উদ্দেশ্য নিয়ে চ্যানেলটি খনন করা হয় সেই উদ্দেশ্যও পূরণ হচ্ছে না। এমনকি আড়াই বছর অতিবাহিত হলেও চ্যানেলটির মেইনটেনেন্স করা হয়নি। এতে পলি পড়ে ফের আগের অবস্থায় ফিরছে চ্যানেলটি।
এনিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) বলছে, বিফলে যাচ্ছে প্রায় ১২৩ কোটি টাকা, যা কাম্য ছিল না। এক্ষেত্রে ইমপ্লিমেন্টেশন এগ্রিমেন্টের ৫ দশমিক ১ (বি) সরাসরি চুক্তির বরখেলাপ হয়েছে। এরই মধ্যে ওই চ্যানেলের কিছু এলাকায় সিলটেশন (পলি) পড়ার কারণে ভারী মালামাল রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত পরিবহন করা সম্ভব হবে না। ফলে চ্যানেলটির নাব্য পাঁচ বছর ঠিক রাখতে আরও ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ ‘মোংলা বন্দর হতে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত পশুর চ্যানেলে ক্যাপিটাল ড্রেজিং’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ কাজ সমাপ্ত করেছে। সমাপ্ত প্রকল্পের প্রভাব মূল্যায়ন সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আইএমইডি। সেই প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ৩৮ দশমিক ৮১ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং সম্পন্ন করতে আলোচ্য প্রকল্পটি ১২২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে জুলাই ২০১৬ থেকে জুন ২০১৯ মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হয়।
আইএমইডির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমদানি করা কয়লা নৌপথে পরিবহনের লক্ষ্যে মোংলা বন্দরের জেটি নম্বর ৯ থেকে উজানে ১৩ কিলোমিটার পর্যন্ত পশুর নদীর পর্যাপ্ত নাব্য অর্জন হয়েছে। তবে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হওয়ার অনেক আগে ড্রেজিংয়ের কাজ সম্পন্ন হওয়ায় ড্রেজিংয়ের সুফল পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। এরই মধ্যে রামপালে নদীর গতিপথেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নদীর অনেক জায়গা বড় মাদার ভেসেল চলাচলের মতো নাব্য হারিয়েছে। তবে নিয়মিত মেইনটেনেন্স ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করা সাপেক্ষে বড় জাহাজ চলাচল করতে পারবে।
আইএমইডির ওই প্রতিবেদন প্রসঙ্গে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা প্রধান মো. জহিরুল হক জাগো নিউজকে বলেন, যখন প্রকল্পটি নেওয়া হয় তখন লক্ষ্য স্থির করা হয় রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে। সে অনুযায়ী ড্রেজিং প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। সে মোতাবেক প্রকল্পটিও সমাপ্ত হয়। তবে পরিবেশবিদ ও ইউনেস্কোর আপত্তির কারণে সময়মতো রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ সমাপ্ত করা যায়নি।
সর্বশেষ ২০২১ সালের ডিসেম্বরে চালুর সিদ্ধান্তও বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা সময়মতো প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করেছি কিন্তু সময়মতো শেষ হয়নি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা না এলেও অনেক শিল্প কারখানায় পণ্য পরিবহনে চ্যানেলটি ব্যবহার করা হচ্ছে।