চট্রলার কন্ঠ নিউজ।
ম্যাচটি ছিল অনেকটা বাঁচা–মরার। হারলে বাজতো বিদায় ঘণ্টা। আর জিতলেও অপেক্ষায় থাকতে হবে শ্রীলংকা–আফগানিস্তান ম্যাচের ফলাফলের ওপর। পিঠ যখন একেবারে ঠেকে গেছে দেওয়ালে, ঠিক তখনই দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াল বাংলাদেশ। যদিও এমন অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর নজির অনেক রয়েছে বাংলাদেশের। এবারের এশিয়া কাপের টিকে থাকার লড়াইয়ে আরো একবার সে নজির গড়ে দেখাল টাইগাররা।
ঘরের মাঠে কয়মাস আগে এই আফগানদের কাছে ওয়ানডে সিরিজ হেরেছিল সাকিবরা। তবে এশিয়া কাপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আর সে পথে পা বাড়ায়নি বাংলাদেশ। ব্যাটে–বলে দারুণ নৈপূণ্য দেখিয়ে কার্যত সুপার ফোর নিশ্চিত করলো টাইগাররা। লাহোরে অনুষ্ঠিত গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানকে ৮৯ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। মিরাজ–শান্তর রেকর্ড গড়া পার্টনারশিপের পর শরীফুল–তাসকিনের আগুন ঝরানো বোলিংয়ে এসেছে এ জয়। দুই ম্যাচে ২ পয়েন্টের সঙ্গে বাংলাদেশের নেট রান রেট এখন +০.৩৭৩। ‘বি’ গ্রুপে বাংলাদেশকে প্রথম ম্যাচে হারানো শ্রীলঙ্কার ঝুলিতে রয়েছে এক ম্যাচে ২ পয়েন্ট। তাদের নেট রান রেট +০.৯৫১। বাংলাদেশের কাছে বড় ব্যবধানে হারা আফগানিস্তানের নেট রান রেট এখন ঋণাত্মক; –১.১৭৮০। গ্রুপের শেষ ম্যাচে আগামীকাল মঙ্গলবার লড়বে আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। কোনো পরিস্থিতিতেই এক সঙ্গে এই দুই দলের রান রেট বাংলাদেশের চেয়ে ভালো হওয়ার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় পাওয়ায় ভালো অবস্থানে আছে শ্রীলঙ্কা। ছোট ব্যবধানে আফগানদের বিপক্ষে হারলেও সুপার ফোরে যাবে তারা। পরের ধাপে বাংলাদেশের সঙ্গী হতে হলে বড় ব্যবধানে জিততে হবে আফগানদের। সেক্ষেত্রে রান রেটে সাকিবের দলের আরও পেছনে চলে যাবে শ্রীলঙ্কা। লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে টসে জিতে গতকাল ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। উদ্বোধনী জুটিতে পরিবর্তন এনে নাঈম শেখের সঙ্গী হিসেবে পাঠানো হয় মেহেদী হাসান মিরাজকে। শুরুটা ভালই ছিল। দুই ওপেনার প্রথম পাওয়ার প্লের ঠিক ১০ ওভারে ৬০ রান করে বিচ্ছিন্ন হন। ৩২ বলে ৫টি চারের সাহায্যে ২৮ রান করে মুজিব উর রহমানের বলে বোল্ড হয়ে ফিরেন নাঈম। পরের ওভারে বড় ধাক্কাটা খায় বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্তর পরিবর্তে তিন নম্বরে নামা তাওহিদ হৃদয় রানের খাতা খোলার আগেই ফিরেন গুলবাদিনের বলে স্লিপে ইব্রাহিম জাদরানের হাতে ক্যাচ দিয়ে। ৬৩ রানে দুই উইকেট হারানোর পর শুরু হয় মিরাজ–শান্তর হৃদয় জুড়ানো ব্যাটিং। আফগান বোলারদের শক্ত হাতে শাসন করতে থাকেন মিরাজ এবং শান্ত। এক পর্যায়ে অবস্থাটা এমন দাড়ায় যে, বল ফেলার জন্য যেন জায়গা খুজে পাচ্ছিলেন না বিশ্বসেরা আফগান বোলাররা। এ দুজন তৃতীয় উইকেট জুটিতে যোগ করেন ১৯৪ রান। সে সাথে দুজনের মধ্যে যেন চলছিল সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার প্রতিযোগিতা। আর সে প্রতিযোগিতায় অবশ্য বিজয়ী মেহেদী হাসান মিরাজ। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন মিরাজ ১১৫ বলে। এরপর শান্তও ছুঁয়েছেন তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার। দলের রান যখন ২৫৭ রান তখন হাতে আঘাত পেয়ে রিটায়ার্ড হয়ে মাঠ ছাড়ের মিরাজ। ১১৯ বলে ক্যারিয়ার সেরা ১১২ রানের ইনিংসটি খেলার পথে মিরাজ ৭টি চারের পাশাপাশি ৩টি ছক্কা মেরেছেন। শান্ত ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন ১০১ বলে। তবে তার দুর্দান্ত ইনিংসটি থামে দুর্ভাগ্যজনক এক রানআউটে। ১০৫ বলে শান্তর ১০৪ রানের ইনিংসটি ছিল ৯ চার আর ২ ছক্কায় সাজানো। মিরাজ এবং শান্তর গড়ে দেওয়া ভিতের উপর দাড়িয়ে বাকিরা ঠিকই দলকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। মুশফিক করেছেন ১৫ বলে ২৫ রান। এরপর সাকিবের ১৮ বলে অপরাজিত ৩২ আর শামীম পাটোয়ারীর ৬ বলে ১১ রানের বদৌলতে ৩৩৪ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। যা বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর। আর আফগানিস্তানের বিপক্ষে সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর। এর আগেরটি ছিল ৩০৬ রানে। যা ২০২২ সালে চট্টগ্রামে করেছিল টাইগাররা।
রানের পাহাড় ডিঙ্গাতে গিয়ে শুরুতেই ধাক্কা খায় আফগানিস্তান। ইনিংসের দ্বিতীয় এবং নিজের প্রথম ওভারে শরীফুল ফেরান রহমানুল্লাহ গুরবাজকে। দলের রান তখন এক। এরপর রহমত শাহ এবং ইব্রাহিম জাদরান মিলে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাসকিন ভাঙেন এ জুটি। এরপর আবার বাংলাদেশের উপর চেপে বসে জাদরান এবং অধিনায়ক শহিদী। তারা যোগ করেন ৫২ রান। ব্যাট হাতে ঝড় তুলতে থাকা ইব্রাহিম জাদরানকে মুশফিকের দারুন এক ক্যাচে পরিনত করে ফেরান হাসান মাহমুদ। এরপর আবার প্রতিরোধ গড়ে তুলেন নাজিবুল্লাহ জাদরান এবং শহিদী। এই জুটি ভেঙে টাইগার শিবিরে স্বস্তি ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ। পরের ওভারে অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদীকে ফেরান শরীফুল। এরপর গুলবাদিন নাইবকে স্টাম্প উপড়ে ফেলেন শরীফুল। মোহাম্মদ নবীকে নিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করেন তাসকিন। শেষ পর্যন্ত ২৪৫ রানে অল আউট হয় আফগানিস্তান। বাংলাদেশের তিন পেসার নিয়েছেন ৮ উইকেট। যেখানে তাসকিনের শিকার ৪টি আর শরীফুলের শিকার ৩টি।