ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গিয়েছে ফল

সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে বিদেশি ফলের বাজার। ক্রমাগত দাম বৃদ্ধি কারণে আপেল, কমলা–মাল্টা ও আঙুর এখন কেবল ধনীদের ফলে পরিণত হয়েছে। সাধারণ ক্রেতারা উচ্চ দামে এসব ফল কিনতে পারছেন না। গত এক বছরের ব্যবধানে আপেল, কমলা–মাল্টাসহ প্রায় সব ফলের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। ডলার সংকটের কারণে বিদেশি ফল আমদানিতে আগের ৩ শতাংশের সাথে নতুন করে আরো ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করে সরকার। এরপর থেকে ফলের বাজার লাগামহীন হয়ে পড়ে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধুমাত্র ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বাড়ানোকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা আমদানির মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ দামে ফল বিক্রি করছেন। বিষয়টি সরকারের কোনো দায়িত্বশীল সংস্থা নজরদারি করছে না। তাই ফলের বাজারে অরাজকতা দেখা দিয়েছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরীর কয়েকটি খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি মাঝারি মানের চীনা আপেল বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকায়। এছাড়া ভারতের কাশ্মীরি আপেল বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। দক্ষিণ আফ্রিকার কমলা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা, মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকা, ভারতীয় ডালিম বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ থেকে ৩৮০ টাকা, চীনা লাল আঙুর ৪২০ টাকা, সাদা আঙুর ৩৫০ টাকা, চীনা নাসপতি ২৪০ টাকা, দেশী ড্রাগন ৩২০ টাকা এবং রাজশাহীর দেশী মাল্টার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।

বহদ্দারহাটের খুচরা ফল বিক্রেতা আব্দুল্লাহ  সাইফুল ইসলাম বলেন, পাইকারিতে দীর্ঘদিন ধরে ফলের বাজার চাঙা রয়েছে। আমদানিকারকরা আমাদের জানিয়েছেন, সরকার ভ্যাট–ট্যাঙ বাড়িয়েছে, তাই আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। আমরা পাইকারি থেকে অল্প অল্প ফল এনে বিক্রি করি। আবার পাইকারি বাজার থেকে পণ্য কেনার পর দেখা যাচ্ছে অনেক ফল পচা কিংবা মান খারাপ। তখন সেগুলো বাধ্য হয়ে কম দামে বিক্রি করতে হয়।

এস এম  ইলিয়াছ উদ্দিন নামের একজন ক্রেতা বলেন, এক কেজি আপেল কিনতে চেয়েছি। কিন্তু একেক দোকানে একেক রকম দাম হাঁকছে। শেষ পর্যন্ত আর কেনা হয়নি।

গতকাল নগরীর ফলমন্ডিতে ফলের আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি কমলা ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা, আপেল বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, ডালিম ২৫০ থেকে ৩২০ টাকা, আঙুর ২৮০ থেকে ৩৪০ টাকা এবং নাসপতি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। পাইকারি বাজারের সাথে খুচরা বাজারে কোনো কোনো ফলের দামের পার্থক্য কেজিতে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা পর্যন্ত।

জানা গেছে, আমাদের দেশে মৌসুমভেদে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আপেল–মাল্টার মতো বিদেশী ফল আমদানি হতো। বিশেষ করে আপেল আমদানি হতো চীন, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। তবে আমদানি ব্যয় বাড়ার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে চীন ও ভারত থেকে আপেল আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া মাল্টা আসতো মিসর ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। বাজারে এখন রয়েছে শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার মাল্টা। এছাড়া আঙুর ও ডালিম চীন ও মিসর থেকে আসতো। তবে বাজারে এখন ভারতীয় ডালিম ও আঙুরের আধিক্য রয়েছে।

স্টেশন রোডের নগরীর ফলমন্ডির কয়েকজন ব্যবসায়ী বলছেন, এক সময় ১০ শতাংশ মার্জিনে ব্যাংকে এলসি (ঋণপত্র) খুলে ফল আমদানি করা যেত। এখন শতভাগ মার্জিন দেয়ার পরেও অনেক ব্যাংক ডলার সংকটের কথা বলে এলসি দিচ্ছে না। এছাড়া ফল পচনশীল পণ্য। সঠিক সময়ে খালাস করতে না পারলে গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়। তখন আর দাম পাওয়া যায় না। তাই অনেক ব্যবসায়ী ঝুঁকি নিয়ে আমদানি করছেন না। এতে বাজারে সরবরাহেরও সংকট রয়েছে। তাই বাজার চড়া।

ফলমন্ডির ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বলেন, বিদেশী ফল আমদানিতে শুধুমাত্র নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক দিতে হচ্ছে ২৩ শতাংশ। এছাড়া ২৫ শতাংশ কাস্টমস শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর ও ৪ শতাংশ অগ্রিম ভ্যাট দিতে হচ্ছে। তাই আমদানি ব্যয়ও বেড়ে গেছে।

বাড়তি দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন চট্রলার কণ্ঠকে  বলেন, বিদেশী ফল এখন সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাইরে চলে গেছে। এক বছর আগে ১২০–১৩০ টাকায় এক কেজি আপেল কেনা যেতো। এছাড়া ১৫০ টাকা ছিল মাল্টার দাম। কিন্তু এখন সেই ফলগুলোর দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। শুধুমাত্র ২০ শতাংশ শুল্ক বাড়ানোর কারণে দ্বিগুণ দাম হওয়া অস্বাভাবিক। তাই বিষয়টি মাথায় নিয়ে প্রশাসনকে ফলের আড়তে নজরদারি বাড়াতে হবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক