চবিতে ভাঙচুরের ঘটনায় ২ মামলায় এক হাজার আসামি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দুটি মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও এক হাজার শিক্ষার্থীকে আসামি করা হয়েছে।

আজ শনিবার রাতে হাটহাজারী থানায় ভাঙচুরের ধারায় এসব মামলা হয়। একটিতে বাদী হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা শেখ মো. আবদুর রাজ্জাক ও আরেকটিতে বাদী হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ।
চট্টগ্রাম জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জেলা বিশেষ শাখা) আবু তৈয়ব মোহাম্মদ আরিফ হোসেন আজ রাত সাড়ে নয়টায় চট্টলার কন্ঠকে  এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মামলার তদন্ত চলছে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে শাটল ট্রেনের ছাদে চড়ে যাওয়ার সময় হেলে পড়া গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১৬ শিক্ষার্থী আহত হন। তাঁদের মধ্যে তিনজন শিক্ষার্থী এখনো চিকিৎসাধীন। এ ঘটনা কেন্দ্র করে রাত ১২টার দিকে ৬৫টি যানবাহন, উপাচার্যের বাসভবন, শিক্ষক ক্লাব এবং পুলিশ বক্স ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

গতকাল শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসে পুলিশ। বৈঠক শেষে রাত সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ, প্রক্টর আজিম সিকদার, নিরাপত্তা কর্মকর্তা শেখ মো. আবদুর রাজ্জাক ও পাঁচজন সহকারী প্রক্টর হাটহাজারী থানায় যান। তবে ওই দিন মামলা না করেই রাত ১২টায় তাঁরা থানা থেকে বের হয়ে যান।
আজের দায়ের করা মামলার বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা শেখ মো. আবদুর রাজ্জাকের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁরা ফোন ধরেননি।

অনিশ্চয়তায় সকল ট্রেন চলাচল :

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের অন্যতম বাহন শাটল ট্রেন। এটি চট্টগ্রাম নগরের বটতলী স্টেশন থেকে ক্যাম্পাস অভিমুখে দিনে সাতবার যাওয়া-আসা করে। এতে দিনে ১০ হাজার শিক্ষার্থী যাতায়াত করেন। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা কিংবা ক্লাস হবে কি না, এটিও নির্ভর করে ট্রেন চলাচলের ওপর।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে শাটল ট্রেনে দুর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ট্রেনটির লোকোমাস্টার (চালক), সহকারী লোকোমাস্টার ও একজন গার্ডকে মারধর করেন। এরপর থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে গতকাল ও আজ ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখেন লোকোমাস্টাররা।

বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক গোলাম শাহরিয়ার আজ শনিবার রাত ১০টায় চট্টলার কন্ঠকে  বলেন লোকোমাস্টারদের নিরাপত্তার ব্যাপারে কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা তাঁরা জানেন না। আদৌ হবে কি না, সেটিও নিশ্চিত নয়। যাঁরা লোকোমাস্টারদের মারধর করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা-ও জানানো হয়নি। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না, এমন নিশ্চয়তা না পেলে তাঁরা ট্রেন চালাবেন না।

আজ রাতে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার রতন কুমার চৌধুরী বলেন, ট্রেন চলাচলের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম চট্রলার কন্ঠকে  বলেন, আগামীকাল রোববার শাটল ট্রেন চলতে পারে।
এ ব্যাপারে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ ও প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁরা ধরেননি। পরে সিন্ডিকেট সদস্য মোহাম্মদ আবুল মনছুর চট্টলার কণ্ঠকে  বলেন, রেলওয়েকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাঁরা ট্রেন চলাচলের জন্য চেষ্টা করছেন। তবে চালকেরা চালাতে চাইছেন না।

আইসিইউতে দুজন:

ট্রেনের ছাদে উঠে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আহত দুজন এখনো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন। তাঁদের মধ্যে একজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অংসুইনু মারমা। তিনি লোকপ্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এ ছাড়া আরও দুজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নিউরো সার্জারি বিভাগে ভর্তি আছেন। তাঁরা হলেন ইংরেজি বিভাগের মোহাম্মদ সান, বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের আবু সাঈদ।

এসব তথ্য চট্টলার কণ্ঠকে নিশ্চিত করেন  চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান। তিনি বলেন, বর্তমানে তিনজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ভর্তি আছেন। তাঁদের সবাই ভালো আছেন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn