আদালত প্রতিবেদক।
বঙ্গবন্ধু ও জেল হত্যা মামলার অন্যতম সাক্ষী ও সাবেক বন্দর চেয়ারম্যান কমোডর (অব.) গোলাম রাব্বানী হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া আসামি মো. সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে নতুন করে রায় ঘোষণা করেছে আদালত। এতে খালাস আদেশ বাতিল করে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গতকাল চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. হালিম উল্লাহ এই রায় ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন।
পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ট্রাইব্যুনালের পিপি অশোক দাশ চট্রলার কণ্ঠকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন করে সাক্ষ্যগ্রহণ, যুক্তিতর্ক শেষে সাইফুল ইসলামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। তিনি বলেন, ঘটনার পর সাইফুল ইসলাম গ্রেপ্তার হলে মামলার বাদী তাকে শনাক্ত করেন। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতেও তিনি তার কথা বলেন। কিন্তু তৎকালীন বিচারকার্যে সেসব আমলে নেওয়া হয়নি। পুনঃবিচারে যা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
আদালতসূত্র জানায়, ২০০৪ সালে ১১ এপ্রিল নগরীর মুরাদপুরে গুলিবিদ্ধ হন গোলাম রাব্বানী। সে সময় তিনি কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে (কেইপিজেড) ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন। এ ঘটনায় কেইপিজেডের সাবেক পরিচালক আবু নাসের চৌধুরী ও কর্মচারী হুমায়ুন কবির চৌধুরীর নাম উল্লেখ করে পাঁচলাইশ থানায় কেইপিজেডের সাইট ইঞ্জিনিয়ার একেএম এমতাজুল ইসলাম মামলাটি দায়ের করেন। একই বছরের ২৮ আগস্ট সাত জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। তারা হলেন আবু নাসের চৌধুরী, হুমায়ুন কবির চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম ওরফে বিলাই সাইফুল, মনছুর আলম, মো. সেলিম, সোহেল প্রকাশ আবদুল মালেক ও মো. হাশেম। পরবর্তীতে চার্জগঠনের মাধ্যমে আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়। ২০০৫ সালের ৭ এপ্রিল মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। এতে মো. সেলিম, মো. হাশেম ও সোহেলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আবু নাসের চৌধুরী ও হুমায়ুন কবির চৌধুরীকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া আসামি সাইফুল ইসলাম, মনছুর আলমকে খালাস প্রধান করা হয়।
আদালতসূত্র আরো জানায়, নিম্ন আদালতের এই রায়ের পর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেন আসামি হাশেম। শুনানি শেষে ২০০৮ সালের ৭ আগস্ট হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ হাশেমের আপিল মঞ্জুর করে তাকে খালাস দেন। ২০০৫ সালে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হাইকোর্টে পৃথক আরো একটি আপিল করেন। তখন রাষ্ট্রপক্ষ আবু নাসের ও হুমায়ুন কবিরের সাজা বৃদ্ধি চেয়ে এবং আসামি সাইফুলের খালাসের বিরুদ্ধে পুনর্বিবেচনার আবেদন করে। শুনানির পর ২০০৫ সালের ২ আগস্ট হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ রুল জারি করেন। এরপর ২০১৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন। এতে আবু নাসের ও হুমায়ুন কবিরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মো. সেলিমের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়।
সোহেলকে খালাস দেওয়া হয় এবং নিম্ন আদালত থেকে খালাস পাওয়া আসামি মো. সাইফুল ইসলামের ক্ষেত্রে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে নতুন করে রায় দিতে বিচারিক আদালতে নথি ফেরত পাঠানো হয়