রামু লম্বরী পাড়া মোহাম্মদ ওসমান স্ত্রীসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন নিয়ে এসেছিলেন কক্সবাজারে দুদকের গণশুনানিতে। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর শ্বশুরবাড়ির শত বছরের বসতবাড়ি। সেখানে ২০টি পরিবারের বসবাস। সবাই হতদরিদ্র। ওই জমি রেললাইনের জন্য অধিগ্রহণ হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ ২ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। ওই টাকা আত্মসাতের জন্য গড়ে উঠে শক্তিশালী সিন্ডিকেট।
তৎকালীন রাজস্ব শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত এডিসি আশরাফুল আফসারের নেতৃত্বে এলও হাসনাত, সার্ভেয়ার মাসুদ ও দালাল শাহজাহান মিলে ওই জমির ভুয়া খতিয়ান বানিয়ে টাকাগুলো আত্মসাত করে নেয়। এ নিয়ে আদালতে ৪টি মামলাও চলমান ছিল। কাউকে টাকা না দেওয়ার জন্য আদালত নোটিশও প্রেরণ করেন। কিন্তু আদালতের অগোচরে ওই সিন্ডিকেট হাতিয়ে নেয় হতদরিদ্র ২০টি পরিবারের সবকিছু।
গতকাল বুধবার (১১ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত পাবলিক লাইব্রেরীর শহীদ সুভাষ হলে টানা ৬ ঘন্টা গণশুনানি চলে। শুনানিতে ওসমানের মতো অসংখ্য ভুক্তভুগী তাঁদের অভিযোগ জানান। মোট ৭৯টি আবেদনের মধ্যে জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার বিরুদ্ধে পাহাড়সম অভিযোগ উঠে।
জেলাজুড়ে সরকারের চলমান মেগা প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ হওয়ার পর সেই টাকা আদায় করতে গিয়ে পদে পদে হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। এখানে কার জমির টাকা কে তুলে নিয়ে গেল তারও সঠিক ব্যাখ্যা নেই। যা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
শুধু ভূমি অধিগ্রহণ শাখা নয়, কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিস, কক্সবাজার উন্নয়ন কতৃর্পক্ষ, সদর হাসপাতাল, ভূমি অফিস, সাব—রেজিষ্ট্রি অফিস, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ বিভাগ, পুলিশ, সমবায় অফিস, সমাজ সেবা অফিস, জেলা হিসাবরক্ষণ অফিস, বন বিভাগ, জেলা প্রশাসনসহ একাধিক সরকারি দপ্তরের বিরুদ্ধে হয়রানির শিকার ব্যক্তিরা গণশুনানিতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেন।
অভিযোগ সমূহ গুরুত্বের সাথে আমলে নিয়ে দুদক (তদন্ত) কমিশনার মো. জহুরুল হক সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। নতুবা পরবর্তীতে দুদক তদন্ত সাপেক্ষে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণশুনানি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার (তদন্ত) মো: জহুরুল হক। তিনি বলেন, আমাদের দেশটা খুব বেশি উদ্ভট। এখানে অশিক্ষিত মানুষগুলো বিদেশ গিয়ে অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠান। আমাদের রেমিটেন্স বাড়ে। আর শিক্ষিত মানুষ দেশের টাকা লুট করে বিদেশে টাকা পাচার করেন। যে টাকা জমা হয় সুইস ব্যাংকে। এসব শিক্ষিত দুর্নীতিবাজদের প্রকাশ্যে ঘৃণা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সব দুর্নীতি নিয়ে দুদক কাজ করেন না। দুদক যে সব অভিযোগ আমলে নিয়ে কাজ করে তার বেশিরভাই সরকারি প্রতিষ্ঠান ঘিরে। এর বাইরে মানি লন্ডারিং বিষয়ে কাজ করে। অপরাপর অপরাধের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা কাজ করে। দুদক আমলে নেওয়া মামলায় এ পর্যন্ত দুর্নীতির ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ ও মানি লন্ডারিং এর ক্ষেত্রে শত ভাগ সফলতা পেয়েছে দুদক।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে দুদক মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আকতার হোসেন, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম, দূনীতি প্রতিরোধ কমিটির জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বকুল বক্তব্য দেন।
এসময় সকল সরকারি দপ্তর প্রধান, জনপ্রতিনিধিসহ সুশীল সমাজের নাগরিকগণ উপস্থিত ছিলেন