নভেম্বর ১১, ২০২৪ ৩:৫৬ অপরাহ্ণ

কাজের দেউরির শিশু পার্ক বন্ধ করে দিল জেলা প্রশাসন

চট্টলার কন্ঠ প্রতিবেদন।

চট্টগ্রাম নগরীর  কাজীর দেউড়িস্থ সার্কিট হাউজ সংলগ্ন শিশু পার্কটি সিলগালা করে জমির মালিক প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে বুঝিয়ে দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। গতকাল দুপুরে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নু–এমং মারমা মং এবং রাকিবুল হাসানের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে পার্কটির মূল ফটক সিলগালা করে দেয়া হয়। এরপর সেখানে একটি বিজ্ঞপ্তি টাঙিয়ে দেয়া হয়। এতে লেখা রয়েছে– “প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্পত্তি। বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ। আদেশক্রমে মিলিটারি এস্টেটস অফিসার, পূর্বাঞ্চল, চট্টগ্রাম সেনানিবাস।”

এর আগে গত ১৯ অক্টোবর সামরিক ভূ–সম্পত্তি প্রশাসন দপ্তর থেকে সিটি মেয়র বরাবর পত্র দিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন জমি (শিশু পার্ক যেখানে গড়ে উঠে) খালি করে দখল জরুরি ভিত্তিতে বুঝিয়ে দেয়ার অনুরোধ করা হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন পুরাতন সেনানিবাসস্থ সার্কিট হাউজের সম্মুখে তিন একর জমি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে (চসিক) ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব প্রদান করা হয়। চসিক শর্ত ভঙ্গ করে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে তৃতীয় পক্ষকে ইজারা প্রদান করে। চসিককে ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব প্রদান সংক্রান্ত অনুমোদন বাতিল করা হয় বলেও ওই পত্রে উল্লেখ করা হয়। অবশ্য সামরিক ভূ–সম্পত্তি প্রশাসন দপ্তর জায়গা খালি করে বুঝিয়ে দিতে বললেও চসিক এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তাই জেলা প্রশাসন গতকাল সিলগালা করে দেয়।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের  ইজারা দেয়া শিশু পার্ক জেলা প্রশাসনের সিলগালা করে দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল চট্টলার কন্ঠকে  বলেন, জায়গাটির মালিক প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রতিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সিটি কর্পোরেশন নিয়েছে এবং সিটি কর্পোরেশন শিশু পার্ক করার জন্য ইজারা দেয়। এখন সরকারের প্রয়োজনে সরকার জায়গা নিতেই পারে। এখন কি জন্য নিয়েছে সেটা চিঠি না দেখে তো আমরা বলতে পারব না। চিঠিটা আমরা এখনো পাইনি। এমনি মন্ত্রণালয় থেকে মৌখিকভাবে বলা হয়েছে লিজটা বাতিল হয়েছে, তবে অফিসিয়ালি কোনো চিঠি পাইনি। এদিকে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে পার্কটি উচ্ছেদে অভিযান চালানো হবে। এর আগে মালামাল সরিয়ে নিতে পার্কটির ইজারাদারকে সময় দেয়া হবে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান আজাদীকে বলেন, উচ্ছেদের পূর্বে ওদেরকে সময় দেয়া হবে, সেটা দুই সপ্তাহও হতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইজারা বাতিল এবং জায়গাটি ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে পৃথক দুটি চিঠি দিয়েছিলাম। এরপ্রেক্ষিতে ইজারা বাতিল করা হয়েছে। যা সিটি কর্পোরেশনকে অবহিত করা হয়েছে। জায়গা ব্যবহারের অনুমতির বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

জানা গেছে, ২ দশমিক ৯০৯৪ একর জমিতে শিশু পার্কটি রয়েছে। ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে দেয়া চসিকের এক পত্রে বলা হয়, শিশু পার্ক নির্মাণের জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনকে দেয়। এরপর ১৯৯২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ‘ভায়া মিডিয়া বিজনেস সার্ভিসেস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ২৫ বছরের জন্য ইজারা দেয় চসিক। ওই চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ১৫ বছরের জন্য ঢাকার ওই একই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ১৫ বছরের চুক্তি নবায়ন করে চসিক।

এদিকে দ্বিতীয় বার চুক্তি নবায়নের ক্ষেত্রে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। ফলে নবায়নকৃত চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এছাড়া চুক্তি নবায়নের আগে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনও নেয়া হয়নি। যা স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইনের লঙ্ঘন। এ বিষয়ে ২০২১ সালের ৭ জুন স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে চসিকের ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়।

জানা গেছে, চসিকের অনুকূলে পার্কটির জায়গার বরাদ্দ বা লিজ বাতিল চেয়ে গত ২৩ আগস্ট প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, ২৭ আগস্ট সামরিক ভূমি ও ক্যান্টনমেন্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ইস্টার্ন সার্কেলের সামরিক ভূ–সম্পত্তি প্রশাসক বরাবর পৃথক তিনটি দাপ্তরিক পত্র দেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। সর্বশেষ গত ১৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ইস্টার্ন সার্কেলের সামরিক ভূ–সম্পত্তি প্রশাসক বরাবর দেয়া আরেকটি পত্রে জায়গাটি জেলা প্রশাসনের অনুকূলে বরাদ্দ চাওয়া হয়। এতে জায়গাটিতে উন্মুুক্ত স্থানসহ মুক্তিযুদ্ধের একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করার প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া জেলা প্রশাসনের চিঠিগুলোতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে অবস্থানরত জাতীয় অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পুরাতন সার্কিট হাউজের সামনের রাস্তায় যানজট নিরসন এবং চট্টগ্রামের আপামর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত মাঠ হিসেবে ব্যবহার এর জন্য পার্কটির জায়গার বরাদ্দ বাতিল করতে বলা হয়।

জেলা প্রশাসনের পত্র সূত্রে জানা গেছে, তথ্য ও সমপ্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জনস্বার্থে জায়গাটি (শিশু পার্ক) ব্যবহারের নিমিত্ত ইজারা বাতিলের জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণের জন্য জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করেছেন। এছাড়া ২০২১ সালের ৯ মে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শিশু পার্কটির ইজারা বাতিলের অনুরোধ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দিন আহমদকে পৃথক দুটি আধা সরকারি পত্র দেন।

এর আগে ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর শিশু পার্কটিকে ‘জঞ্জাল’ আখ্যায়িত করে অপসারণের দাবিতে পার্কের সামনে ‘নাগরিক উদ্যোগ’ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন হয়েছিল। ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারিও সংগঠনটির ব্যানারে উচ্ছেদের দাবিতে পার্কের সামনে মানববন্ধন হয়েছিল। সংগঠনটির প্রধান উপদেষ্টা চসিকের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।

উল্লেখ্য  ২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সভায় তৎকালীন ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে পার্কটি বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ২০০৯ সালের ৬ মে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তৃতীয় সভায় শিশু পার্কটি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জানা গেছে, ১৯৯২ সালের ১৩ জুলাই তিন একর জায়গার উপর শিশুপার্ক স্থাপনে চসিককে অনাপত্তি দেয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে ২০০৮ সালের ২৮ জানুয়ারি চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টের তৎকালীন এঙিকিউটিভ অফিসার মোহাম্মদ নুরুল আবছার স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে সেনাবাহিনী নিজেদের জমি ফেরত চান।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক