অক্টোবর ৪, ২০২৪ ৫:৫৩ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামে নৌকার বৈঠা পেলেন যারা

মনসুর আলী খান।

Cvoice24.com

চট্টগ্রামে নৌকার বহরে নতুন চার মুখ

 সিভয়েস প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: ১৬:৩৩, ২৬ নভেম্বর ২০২৩
চট্টগ্রামে নৌকার বহরে নতুন চার মুখ

চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অপেক্ষার প্রহর শেষ। চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠা পেরিয়ে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। রবিবার বিকেলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন।

বাবার ত্যাগে ছেলের হাতে নৌকার টিকিট

nagad

nagad

চট্টগ্রাম ১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সংসদে বসেছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তবে এবার তিনি নিজে সরে গিয়ে জোর দেন ছেলেকে প্রার্থী করতে। ছেলের হয়ে তিনি নিজেই মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। ফলে পিতৃ বিবেচনায় সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন তার ছেলে মাহবুবুর রহমান।

আসনটিতে মনোনয়ন দৌঁড়ে এগিয়ে ছিলেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের নেতা নিয়াজ মোর্শেদ এলিট, মিরসরাই উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দীন। এছাড়া মহাজোটের শরীক দল সাম্যবাদী দলের হয়ে সেখানে লড়তে চাইছেন সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া।

সবাইকে টেক্কা দিয়ে চট্টগ্রামে একমাত্র নারী প্রার্থী সনি

ফটিকছড়িতে ‘ভান্ডারি’ হটাতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়েছিলেন বর্তমান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম। এবারও তাঁর ইচ্ছে ছিল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার। পদ না ছাড়লেও নৌকার টিকিট কেটেছিলেন পেয়ারুল। তার সঙ্গে মনোনয়ন দৌঁড়ে ছিলেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আফতাব উদ্দিন চৌধুরী, উপজেলা চেয়ারম্যান হোসাইন মো. আবু তৈয়ব, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নাজিম উদ্দিন মুহুরীসহ অনেকে। সবাইকে ‘টেক্কা’ দিয়ে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক এমপি কন্যা খাদিজাতুল আনোয়ার সনি।

১৯৯৬, ২০০১ সালে পরপর দুবার ফটিকছড়ির সাংসদ ছিলেন প্রয়াত রফিকুল আনোয়ার। তাঁর মেয়ে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। ১৯’সালে সংরক্ষিত আসনের এমপি হয়ে প্রথম সংসদে বসেন। এছাড়াও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন তিনি।

ফটিকছড়িতে দলীয় নানা বিভেদ থাকলেও নির্বাচন ঘিরে ‘ভান্ডারি হটাতে’জোটবদ্ধ সবাই। আগে প্রকাশ্যে পরষ্পর বিরোধী বক্তব্য থাকলেও এখন কাদা ছোঁড়াছোড়ি বন্ধ। বছর ধরে আসনটি উদ্ধারে তৎপরতা চালাচ্ছিলেন স্থানীয় নেতারা।

তবে শেষপর্যন্ত নৌকার পাল তিনি ওড়াতে পারছেন কিনা তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে জোটের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত। কেননা তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী আসনটির জন্য অনড় রয়েছেন। জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে সিদ্ধান্ত বদলাতেও পারে। যদিও ভান্ডারির ‘পাতে’ হাত বাড়িয়েছে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান শাহজাদা ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমেদ। তিনিও ফটিকছড়ির খুব পরিচিত মুখ। এবার নির্বাচন করবেন তিনি। কোনো কারণে নজিবুলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দূরত্ব থেকে গেলে শেষ হাসি হাসতে পারেন সাইফুদ্দীন। উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গেও বর্তমান এমপির টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে জোটও বাঁধছেন অনেকে।

সাগর পেরিয়ে আবার নৌকার হাল ধরলেন মিতা

বঙ্গোপোসাগর বেষ্টিত দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের বর্তমান সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা। ২০০৯ সালে মনোনয়ন না পেলেও পরের দুই সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়েছেন তিনি। এবারও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন মিতা। সাগর দ্বীপে নৌকার পাল ওড়াতে তার সঙ্গে আঁটসাঁটভাবে নেমেছিলেন উত্তর জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান।

মাঠে ছিলেন পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাফর উল্লাহ টিটু, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান ডা. জামাল উদ্দীন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এ কে এম বেলায়েত হোসেন, চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাজিবুল আহসান সুমন, মা সাবেক সাংসদ এম ওবায়দুল হকের সন্তান চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য সরওয়ার জাহান জামিল শামিম, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রুমানা নাসরিন রুমু এবং ইউছুপ আলি জীবন।

‘খুঁটি’ভাঙলো এমপি দিদারের 

শুরু থেকে স্বতন্ত্র একটি অবস্থান তৈরির চেষ্টা করছিলেন বর্তমান সংসদ সদস্য দিদারুল আলম। এসব নিয়ে বিরোধ দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিরোধ গড়িয়েছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক কারণে শক্ত বলয় ছিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন। তাদের বিভক্তির মধ্যে মনোনয়ন দৌঁড়ে শামিল হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল বাকের ভূঁইয়াও।

আসনটিতে মনোনয়ন বাগিয়ে নিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন। তার সঙ্গে অন্যান্য যারা মনোনয়ন দৌঁড়ে ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির সদস্য লায়ন মোহাম্মদ ইমরান, চসিক কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমদ মঞ্জু, রত্নেন্দু ভট্টাচার্য, মোহাম্মদ ফখরুদ্দীন চৌধুরী, মোহাম্মদ পারভেজ উদ্দিন, মহি উদ্দিন, আবু মনির মো. শহিদুল হক চৌধুরী এবং চৌধুরী মোহম্মদ জিন্নাত আলী।

সব বলয় ‘ডিঙিয়ে’এম এ সালামের জয়

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম। তবে মহাজোটের কারণে দলের জন্য ‘স্যাক্রিফাইস’ করতে হয় তাকে। দলীয় বদৌলতে এমপি বনেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এবারও মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালামকে। তবে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে জোটের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত।

এই আসনে আওয়ামী লীগের আরও চারটি বলয়। এর মধ্যে একটি বলয়ের নেতৃত্ব দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইউনুস গনী চৌধুরী, বাকি তিনটি বলয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন শাহ, জেলা যুবলীগের সভাপতি রাশেদুল আলম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন নোমান।

মনোনয়ন চেয়েছিলেন— চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এডভোকেট ইব্রাহিম চৌধুরী চৌধুরী বাবুল, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইউনুস গনি চৌধুরী, সহ-সভাপতি মোহাম্মদ মইনুদ্দিন, আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ ইউনুছ, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ কমিটির সদস্য মো. রাশেদুল ইসলাম, উত্তর জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. শামীম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মনজুরুল আলম চৌধুরী এবং উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বাসন্তী প্রভা পালিত।

ফজলে করিমের হাতেই রাউজানের নৌকার বৈঠা

টানা চারবারের সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরী। রেলপথ সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিসহ সরকারি নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। চট্টগ্রাম থেকে মন্ত্রীর হওয়ার হিসেব নিকেশেও রাখা হয়েছিল তাকে। তবে স্থানীয় রাজনৈতিক বিরোধের মুখে পড়তে হয়েছে তাকেও। অনেকটা একক প্রার্থী হবেন বলে ধারণা করলেও শেষ পর্যন্ত নৌকার টিকিট কেটেছেন ৯ জন। সব বাধা ডিঙিয়ে টিকিট উঠেছে ফজলে করিম চৌধুরীর হাতেই।

ফজলে করিম চৌধুরীর সঙ্গে মনোনয়ন দৌঁড়ে ছিলেন সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা দেবাশীষ পালিত, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুসলিম খান, মোহাম্মদ আবুল কালাম, ইমরানুল কবীর, মোহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী, আলহাজ্ব মো. সালামত আলী এবং বকতিয়ার উদ্দিন খান।

‘অপ্রতিরোধ্য’ হাছান মাহমুদ

আ.লীগের এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। টানা ১০ বছর রাঙ্গুনিয়ার এমপি। দুবারই পেয়েছেন মন্ত্রীত্ব। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সামলিয়ে বর্তমানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছেন তিনি। এবারও চট্টগ্রাম ৭ আসন থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তাকে। তার বিপরীতে মনোনয়ন ফরম নিয়েও জমা দেননি যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ ওসমান গনি চৌধুরী।

ফের সুযোগ পেলেন নোমান আল মাহমুদ

মোছলেম উদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর বোয়ালখালী-চান্দগাঁও (চট্টগ্রাম ৮) আসনে উপ-নির্বাচনে জয়ী হয়ে সবেমাত্র হাল ধরেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ। সময় পেয়েছেন মাত্র ৮ মাস। স্বল্প সময়ের জন্য যারা এমপি হয়েছিলেন তাদের মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিতই ছিল, মনোনীতদের তালিকা চূড়ান্তের একদিন আগে যার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন খোদ দলের সাধারণ সম্পাদক।

এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, আওয়ামী লীগ নেতা আরশেদুল আলম বাচ্চু, মাঈনুদ্দিন খান বাদলের স্ত্রী সেলিনা খান, আওয়ামী লীগ নেতা আরশেদুল আলম বাচ্চু,  মোহাম্মদ বেলাল হোসেন, কাউন্সিলর মোহাম্মদ মোবারক আলী, মোহাম্মদ দিদারুল আলম, কাজী শারমিন সুমি, এস এম নুরুল ইসলাম, এস এম কফিল উদ্দিন, বিজয় কুমার চৌধুরী, এটি এম আলী রিয়াজ খান, জিনাত শাহেনা চৌধুরী, মোহাম্মদ ইমরান, জাবেদুল আলম মাসুদ, মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, মোহাম্মদ খুরশেদ আলম, মোহাম্মদ মনসুর আলম, মো. আব্দুল কাদের, কফিল উদ্দিন খান, শেখ আমেনা খাতুন, এম এ সুফিয়ান সিকদার, আশেক রসুল খান, মো. নুরুল আনোয়ার, মোহাম্মদ আবু তাহের, মাহমদ দিদারুল আলম, মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ ২৭ জন।

এবারও চমক আনলেন নওফেল

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের চমক ছিল মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়া উদ্দিন বাবলুর হাত থেকে বৈঠা উঠে তাঁর হাতে। সেবার চট্টগ্রামের ১৫টি আসনের পুরনো সংসদ সদস্যদের সঙ্গে মনোনয়ন পান তিনি। নির্বাচনী বৈতরণীও পার করে যুক্ত হন সরকারি বহরেও। শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পড়ে তার কাঁধে।

এবার নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দিন, দুই সহ-সভাপতি সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ ও ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী, জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর শেখ ইফতেখার সাইমুনসহ অনেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছিলেন এই আসন থেকে।

ভাগ্য সুপ্রসন্ন মহিউদ্দিন বাচ্চুর

চট্টগ্রাম-১০ (পাহাড়তলী, ডবলমুরিং) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু। তিনি কয়েকমাস আগে অনুষ্ঠিত হওয়া উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তিনি ছাড়াও ১৯ জন আসনটিতে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন। শীর্ষ নেতাদের মনোনয়ন না দিলে এবারও তার কপাল খুলতে পারে বলে ধারণা ছিল সবার।  যদিও উপ-নির্বাচনের এমপি হিসেবেও বল অনেকটা তার কোর্টেই ছিল। তাই হয়েছে, আসনটিতে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু। নগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক ছিলেন তিনি।

এবারও হতাশ হতে হল সুজনকে, বন্দর-পতেঙ্গা লতিফেরে হাতে

২০০৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েও হাত ফসকে যায় নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনের। মনোনয়ন বাগিয়ে নেন চট্টগ্রাম চেম্বারের তৎকালীন সভাপতি এম এ লতিফ। জীবনের শেষ সময়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আরেকবার সুযোগ চেয়েছিলেন এক সময়ের ছাত্রনেতা সুজন। তবে এবারও হতাশ হতে হয়েছে তাকে। মনোনয়ন পেয়েছেন তিন বারের সাংসদ এম এ লতিফ।

ব্যবসায়ী নেতা লতিফ ২০০৮ সালের নির্বাচনের মধ্যদিয়ে প্রথম আওয়ামী লীগে সক্রিয় হন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য।

চট্টগ্রাম বন্দর, চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা (সিইপিজেড) ও কর্ণফুলী ইপিজেডের এই আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দীনসহ অনেকেই। গুরুত্বপূর্ণ এই আসন থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছিলেন অন্তত দুই ডজন মনোনয়ন প্রত্যাশী।

প্রবীণ নেতা মোতাহেরুল ইসলামের আরেক অর্জন

গেল আগস্টে গণভবন থেকে পূর্ণ সভাপতির মর্যাদা নিয়ে চট্টগ্রাম ফিরেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মোতাহেরুল ইসলাম। এবার আরেক অর্জন তাঁর। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।

দুইবারের সংসদ সদস্য হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নাছির উদ্দিন চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা বদিউল আলম। মনোনয়ন প্রত্যাশার সারিতে ছিলেন সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি চেমন আরা তৈয়বসহ আওয়ামী লীগের অনেকে।

ভূমিমন্ত্রী জাবেদের ওপর আস্থা

‘দলিল যার, ভূমি তার’ — নতুন ভূমি আইনের জন্য দেশজুড়ে প্রশংসিত ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। নিজ নির্বাচনী এলাকা আনোয়ারা-কর্ণফুলীতে তার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। আওয়ামী লীগও তার ওপর আস্থা রেখেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে তাকে মনোনীত করেছে। ২০১৩ সালে বাবা আখতারুজ্জামান চৌধুরীর মৃত্যুর পর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ নির্বাচনে ফের বিজয়ী হয়ে ভূমিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। তাঁর মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত হলেও এ আসনে টিকিট কেটেছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহজাদা মহিউদ্দিনসহ আরও একজন। তবে এই আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী ছিলেন আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ওয়াসেকা আয়েশা খান।

সবাইকে পাশ কাটিয়ে বীরমুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলামের জয়

চট্টগ্রাম ১৪ আসনে নজর পড়েছিল ডজনের বেশি মনোনয়ন প্রত্যাশীর। তালিকায় দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কাণ্ডারি মফিজুর রহমান থেকে শুরু করে সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আফসার উদ্দিনের ছেলে ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ উদ্দিন আহমদ আসিফ, মোহাম্মদ আবদুল কৈয়ম চৌধুরী এম মাসুদ আলম চৌধুরী,  রফিকুল ইসলাম, মোহা. কায়কোবাদ ওসমানী, মোহাম্মদ আবদুল কৈয়ম চৌধুরী, মোহাম্মদ আবদুল জব্বার চৌধুরী, জাহিদুল ইসলাম, মীর মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, আবুল বশর ভূঁইয়া, মাহবুবুর রহমান, মামুন উল হক চৌধুরী, শাহিদা আক্তার জাহান ও আবু আহমেদ চৌধুরীর। সবাইকে পাশ কাটিয়ে মনোনয়ন পেয়ে গেলেন বর্তমান সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম চৌধুরী।

টিকে গেলেন নদভী, একূল-ওকূল হারালেন মোতালেব চেয়ারম্যান

চট্টগ্রাম ১৫ আসনের প্রতিনিধি হয়ে সংসদে বসতে সম্প্রতি উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়েছেন সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেব সিআইপি। পদত্যাগ পত্রে ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করলেও মূলত প্রার্থী হতেই পদ ছাড়েন তিনি। বর্তমান সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীকে ঠেকিয়ে মনোনয়ন প্রতিযোগিতায় তাকে টেকাতে একাট্টা হয়েছিলেন অনেকেই। মনোনয়ন ফরম তোলা প্রভাবশালী এক স্থানীয় নেতাও ভিড়েছিলেন তার দলে। তবে শেষ পর্যন্ত সব অভিযোগের পাহাড় চাপা দিয়ে মনোনয়ন পেলেন প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী। হেভিওয়েট মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে কেন্দ্রীয় নেতা আমিনুল ইসলাম আমিন তালিকায় থাকলেও রাজনৈতিক দ্বদ্বের কারণে প্রকাশ্য প্রতিযোগিতা চলেছে মোতালেব-নদভীর মধ্যে। তারা ছাড়াও এই আসনে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মঈনুদ্দিন হাছান চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান, কেন্দ্রীয় স্বাচিপ নেতা ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান, সৈয়দ মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন,সাজেদা সুরাত, মঈনুল ইসলাম মামুন, কামরুন নাহার, মোহাম্মদ আমান উল্লাহ জাহাঙ্গীর,এরশাদুল হক, জসীম উদ্দিন চৌধুরী, আমিনুল ইসলাম, আবু সফিয়ান, অহিদ সিরাজ চৌধুরী ও দেলোয়ার হোসেন।

থামানো গেল না বাঁশখালীর মোস্তাফিজুর রহমানকে

বাঁশখালীর বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানকে ঠেকিয়ে দলের টিকিট কেটেছিলেন হেভিওয়েট অনেকে। আঁটসাটভাবে মাঠে নেমেছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মুজিবুর রহমান সিআইপি। টিকিটের আশায় শেষমুর্হুতে উপজেলা চেয়ারম্যানের চেয়ার ছেড়েছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের আমৃত্যু সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম অ্যাডভোকেট সোলতানুল কবির চৌধুরীর উত্তরসুরি দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বাঁশখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী মোহাম্মদ গালিব সাদলী। শুধু তারা নন, এমন হ্যাভিওয়েট আরও ১৭ জন টিকিট কেটেছিলেন নৌকা পেতে। শেষমেশ নৌকা পেলেন মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক