ইমরান নাজির
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে চতুর্থবারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন এম এ আব্দুল লতিফ। আর এবার পরপর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া এই হেভিওয়েট প্রার্থীর সঙ্গে টেক্কা দিতে আটঘাঁট বেঁধে মাঠে নেমেছেন ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন। আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মনোনয়নপত্রও জমা দিয়েছেন তিনি। তার ওপর ‘আশীর্বাদ’ রয়েছে নগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দেরও।
এদিকে পরপর তিনবার সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এম এ আব্দুল লতিফ হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেন ডিপ্লোমা ইন লেদার টেকনোলজি (জার্মানি)। তিনি নগদ টাকার দিক দিয়ে এইচএসসি সুমনের চেয়ে এগিয়ে আছেন। তবে আয় ও সম্পদ দ্বিগুণেরও বেশি সুমনের।
নগদ টাকায় এগিয়ে লতিফ, সম্পদে সুমন
হলফনামায় নিজেকে ‘ব্যবসায়ী’ হিসেবে উল্লেখ করা সংসদ সদস্য লতিফের কাছে নগদ রয়েছে ২ কোটি ৩৭ লাখ ৯০ হাজার ৮৬১ টাকা। তার স্ত্রীর রয়েছে ৫২ লাখ ১৯ হাজার ২৩০ টাকা। এমএ লতিফের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজের জমা আছে ৪২ লাখ ৪২ হাজার ৬২৩ টাকা, স্ত্রীর জমা ৭৮ লাখ ৪৪ হাজার ৪৫৭ টাকা।
এছাড়া বন্ড ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানিতে নিজের শেয়ার আছে ৮ লাখ ৪৬ হাজার ৬৫০ টাকার এবমগ স্ত্রীর ৪৪ লাখ ৭৩ হাজার ৩২৫ টাকা। তার রয়েছে ৭ লাখ ৫ হাজার ২৫০ টাকার গাড়িও।
অন্যদিকে, জিয়াউল হক সুমনও হলফনামায় নিজেকে ‘ব্যবসায়ী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার নগদ রয়েছে ৮৭ লাখ ৩৫ হাজার ২৬৩ টাকা। যা এমএ লতিফের তুলনায় কম। সুমনের স্ত্রীর নামে নগদ রয়েছে ১ লাখ টাকা। ব্যাংকে তার রয়েছে ১৫ কোটি ৪৮ লাখ ৩৫ হাজার ৭৪৯ টাকা। স্ত্রীর রয়েছে ৯৮ লাখ ৪১ হাজার ১শ’ টাকা।
এছাড়া বন্ড ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানিতে নিজের শেয়ার আছে ৮ লাখ ৪৬ হাজার ৬৫০ টাকা এবং স্ত্রীর ৪৪ লাখ ৭৩ হাজার ৩২৫ টাকা। তার স্ত্রী ও নিজের নামে গাড়ি আছে মোট ৪টি। যারমধ্যে ৩টিই স্ত্রীর নামে।
লতিফের চেয়ে আয় বেশি সুমনের
হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এমপি লতিফের কৃষিখাত থেকে বাৎসরিক আয় ১৯ লাখ ১৫ হাজার ৮৪৭ টাকা। পেশায় ব্যবসায়ী এই এমপির ব্যবসা থেকে বছরে আয় ২০ লাখ ৭২ হাজার ৩৪৪ টাকা। এছাড়া শেয়ার থেকে ২ হাজার ৩৬৫ টাকা, চাকরি এবং সম্মানি বাবদ ২৫ লাখ ৩৫ হাজার ৩১৫ টাকা আয় করেছেন তিনি। অন্যান্য খাত থেকেও আয় করেছেন ৯ লাখ ৫৬ হাজার ৪১১ টাকা।
অন্যদিকে, ব্যবসায়ী সুমনের আয় বেশি কৃষি থেকেই। এই খাত থেকে তার বাৎসরিক আয় দেড় কোটি টাকা। আর ব্যবসা থেকে ৩০ লাখ ৩৪ হাজার ১৫৫ টাকা। এছাড়া শেয়ার থেকে ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৩১০ টাকা, বাড়ি ভাড়া হিসেবে ৬৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং সম্মানি বাবদ তিনি আয় করেন ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
সুমনের ঋণ অর্ধকোটি টাকা, নেই লতিফের
হলফনামায় থাকা তথ্য অনুযায়ী জিয়াউল হক সুমনের ঋণ আছে মোট ৪৫ লাখ ৭২ হাজার ২৩৯ টাকা। এর মধ্যে লোন বাবদ ব্র্যাক ব্যাংকের পাওনা ৩৫ লাখ ২২ হাজার ২৩৯ টাকা। বাকি ৩ লাখ টাকা পাবে বনফুল এবং ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাওনা ওয়ালটন কোম্পানির।
তবে সংসদ সদস্য এমএ লতিফের কোনো ঋণ বা দায়-দেনা নেই বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি।
এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১১ আসন থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মোট ৯ জন। ভোটারদের ধারণা—এদের মধ্যে বর্তমান সংসদ সসদ্য এমএ লতিফ এবং ‘বিদ্রোহী’ স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক সুমনের মধ্যেই হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। এরইমধ্যে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতান উদ্দিন চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনকেও প্রকাশ্যে সমর্থন দিতে দেখা গেছে সুমনের প্রতি।