পরকীয়া প্রেমে মজে সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া শিশু সন্তানের পড়ালেখার খরচও বন্ধ করে দেন তুহিন। এমন অমানুষিক নির্যাতন সইতে না পেরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) সদর দপ্তরে অভিযোগের পর নগরের খুলশী থানায় মামলা দায়ের করেন স্ত্রী। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এ পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর আদালতে হাজির করলে বিচারক তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল হালিমের আদালত শুনানি শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
পুলিশের প্রসিকিউশন শাখা সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ সদস্য শহিদুল ইসলাম তুহিনের পক্ষ থেকে জামিন আবেদন করা হলে আদালত তা নামঞ্জুর করেন।
শহিদুল ইসলাম তুহিন কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার নবীয়াবাদ সরকার বাড়ির মৃত আব্দুল হান্নান মিয়ার ছেলে। বর্তমানে নগরের খুলশী থানাধীন নাসিরাবাদ সিএন্ডবি কলোনি সরকারি কোয়ার্টারে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করেন। তিনি সিএমপি দক্ষিণ বিভাগের চকবাজার থানায় কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
মামলার এজহারে তুহিনের স্ত্রী অভিযোগ করেন, ২০০৮ সালে ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক বিয়ের পর থেকে তারা চট্টগ্রাম নগরে বসবাস করেন। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাদের সংসার।
শহিদুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে স্ত্রী উল্লেখ করেন, তিনি (শহিদুল) প্রায়সময় ডিউটি শেষে বাসায় ফিরে সংসারে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঝগড়া করেন। পরবর্তীতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। এরই মধ্যে গত এক বছর ধরে তার আচরণগত পরিবর্তন আমাকে পরকীয়া সন্দেহের প্রবণতা বাড়াতে থাকে।
শহিদুলের পরকীয়া প্রেম ধরা পড়ার বিষয়ে স্ত্রী জানান, চলতি বছরের ৬ জুন মেয়ের পরীক্ষা থাকায় সকাল ৭টায় বাসা থেকে বেরিয়ে সাড়ে ১০টায় বাসায় ফিরে আসি। এসময় আমার বাসার ভেতর থেকে এক নারীকে বের হতে দেখে তাকে ধরার চেষ্টা করলে সেই নারী দৌড়ে পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে শহিদুলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বাসা থেকে বেরিয়ে যান। সেদিন দুপুর আড়াইটার দিকে শহিদুল বাসায় এসে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ২ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। অস্বীকৃতি জানানোর কারণে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। কিন্তু ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে নীরবে তার সব অত্যাচার সহ্য করি। শহিদুলের পরকীয়ার বিষয়টি জানার পর থেকে তিনি মেয়ের স্কুলের বেতন ও সংসারের দৈনন্দিন বাজার করা বন্ধ করে দেন বলে উল্লেখ রয়েছে মামলার এজহারে।
এজহারে আরও উল্লেখ করা হয়, নিরুপায় হয়ে দোকান থেকে বাকিতে বাজার করে দিনাতিপাত করতে থাকি। গত ১৪ জুন ডিউটি শেষে বাসায় ফিরলে তাকে মেয়ের স্কুলের বেতন পরিশোধের কথা বললে তিনি আবারও ২ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে আমাকে বেদম মারধর করেন। এসময় মেয়ে আমাকে বাঁচানো চেষ্টা করলে মেয়েকেও মারধর করে বাসা থেকে বেরিয়ে যান তিনি। এসময় তিনি নিজের মোবাইল ফোন বাসায় ফেলে যান। ব্যবহৃত মোবাইল ফোন পর্যালোচনায় সেই নারীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের বিভিন্ন আপত্তিকর কথাবার্তা পাওয়া যায়। ২১ আগস্ট (রোববার) নগরের খুলশী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করি।
খুলশী থানা সূত্রে জানা গেছে, স্ত্রীর মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (২২ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগরীর খুলশী থানাধীন টেকনিক্যাল মোড় এলাকা থেকে শহিদুল ইসলাম তুহিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।