নিম্নমানের কাজ করলে ঠিকাদারদের বিল দেয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। গতকাল অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) বর্তমান পর্ষদের ৩৫ তম সাধারণ এ ঘোষণা দেন তিনি। সভায় চসিকের প্রকৌশল ও বিদ্যুৎ বিভাগের উপরও কিছুটা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন মেয়র। সড়ক বাতি না জ্বলা এবং বিভিন্ন সড়কে গর্ত ও ফুটপাতের স্ল্যাব ভেঙে গেলেও তা সঠিক সময়ে অবহিত করে মেয়রকে প্রতিবেদন না দেয়ায় এ অসন্তুষ্টির কারণ। এ সময় প্রকৌশলীদের মেয়র বলেন, দায়িত্ব পালনে কারো কোনো গাফেলতি সহ্য করা হবে না। এসময় তিনি দ্রুত সময়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে জেব্রা ক্রসিং নির্মাণে নির্দেশনা দেন।
এদিকে সভায় চসিকের কয়েকজন কাউন্সিলর নাগরিক বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন। এর মধ্যে সিডিএ এভিনিউ ও মুহাম্মদপুরের সংযোগকারী এমদাদ আলী সড়কে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় সিডিএ ব্রিজ করার কথা থাকলেও তা শেষ না করায় পথচারীদের ভোগান্তি হচ্ছে বলে জানানো হয়। একইভাবে শীতলঝর্ণা খালের পাশে রেল লাইনের পাশে পূর্ব প্রতিশ্রুত ব্রিজ না করার অভিযোগ করা হয়। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে চাঁন্দমিয়া সড়কের কাজ শেষ না হওয়া নিয়েও অভিযোগ করেন এক কাউন্সিলর।
হামিদচর এলাকায় সিডিএ’র করা সড়ক উঁচু হয়েছে। এতে ওই এলাকার জেলেপাড়ায় জলাবদ্ধতার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এ বিষয়েও সিডিএ’র দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় সভা থেকে।
ঠিকাদারদের সতর্ক করলেন মেয়র :
ঠিকাদারদের সতর্ক করে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, কোনো ঠিকাদার কাজ নিয়ে কাজ ফেলে রাখতে পারবেন না এবং নিম্নমানের কাজও করতে পারবেন না। কেউ নিম্নমানের কাজ করলে চূড়ান্ত বিল দেয়া হবে না। তিনি বলেন, কাজের মালামাল এবং কাজ শেষে কাজের গুণগত মান পরীক্ষায় আমরা ল্যাব করে দিয়েছি। সেখান থেকে পরীক্ষা করে তারপর বিল দেয়া হবে। এবিষয়ে কোনো ক্ষমা নেই। কারো কোনো তদবিরও শুনব না।
মাসের পর মাস লাইট কেন বন্ধ থাকবে? :
মেয়র বলেন, রাস্তা গর্ত হয়ে থাকে। ফুটপাতের স্ল্যাব ভেঙে গেছে। এসব বিষয়ে প্রতিবেদন দেয়া হয় না কেন? এগুলো আমাকে জানতে হয় হোয়াটসঅ্যাপে নাগরিকদের পাঠানো ম্যাসেজে। অথচ নির্বাহী প্রকৌশলীদের অধীনে সুপারভাইজাররা আছেন, সাব–এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়াররা আছেন। তিনি বলেন, আমাদের রাস্তাগুলো ১০ থেকে ১২ টনের উপযোগী করে বানানো। কিন্তু অনেকে অবৈধভাবে ৩০ থেকে ৪০ টন মাল লোড করে গাড়ি চালাচ্ছে। এতে অনেকগুলো রাস্তা ভেঙে গেছে। এ ধরনের সড়কগুলো দ্রুত সংস্কার করুন।
এসময় মাসের পর মাস সড়কবাতি কেন বন্ধ থাকবে সে প্রশ্নও তুলেন মেয়র। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের সুপারভাইজাররা কে কোন এলাকায় দায়িত্বে আছেন তা কাউন্সিলরদের জানিয়ে দিবেন। দায়িত্ব পালনে কারো কোনো গাফিলতি সহ্য করা হবে না। কোনো প্রকল্পের কাজ যাতে নিম্নমানের না হয় সে বিষয়ে কাউন্সিলরদের নজর রাখতে হবে।
নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে জেব্রা ক্রসিং নির্মাণের নির্দেশনা দিয়ে মেয়র বলেন, শহরের সৌন্দর্য ও নিরাপত্তার স্বার্থে মিড আইল্যান্ডগুলো উচুঁ করে নির্মাণ করা হচ্ছে। যাতে মানুষ যত্রতত্র রাস্তা পারাপার করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় না পড়ে।
তারের জঞ্জাল থাকবে না :
মেয়র নগরের সৌন্দর্য রক্ষায় তারের জঞ্জাল অপসারণ করার বিষয়ে বলেন, চট্টগ্রামকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব বাণিজ্যের কেন্দ্রে রূপান্তরে অনেকগুলো মেগা প্রকল্প নিয়েছেন। চট্টগ্রামের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও তারের জঞ্জাল উন্নয়নের সৌন্দর্য বিনষ্ট করছে। অনেক সময় বিদ্যুতের খুঁটিতে এ তারের জন্য বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা ঘটছে। এজন্য আমি ডিশ–ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় করেছি। আমরা দুটি প্রস্তাব দিয়েছি। হয় আপনারা পৃথক খুঁটি তৈরি করে ট্রে ব্যবহার করে গুছিয়ে তারগুলো নিন। অথবা আমাদের ভূ–গর্ভস্থ নালা ব্যবহার করে তার নিন। ইতোমধ্যে লালখানবাজার ওয়ার্ডে একটি পাইলট প্রকল্প চলমান আছে। ভবিষ্যতে সবার মতামতের ভিত্তিতে নগরকে তারের জঞ্জাল থেকে মুক্তি দিতে চাই।
পর্যাপ্ত জ্রেবা ক্রসিং নেই :
নগরে পর্যাপ্ত জেব্রা ক্রসিং নেই বলে জানিয়েছেন সভায় জানিয়েছেন সিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের এডিসি মো. কাজী হুমায়ুন রশীদ। তিনি পর্যাপ্ত জেব্রা ক্রসিং নির্মাণ করা জরুরি বলেও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, হকারদের উঠিয়ে দিলেও তারা আবারও বসে যায়। এজন্য মেয়রের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের সবগুলো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে অভিযান পরিচালনা প্রয়োজন।
তিনি জিইসি মোড়ে সেন্ট্রাল প্লাজার সামনে ত্রিমুখী সড়কে নিয়মিত দুর্ঘটনা হচ্ছে জানিয়ে দুর্ঘটনারোধে একটি গোলচত্বর নির্মাণের পরামর্শ দেন।
সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী রাজিব দাশ জানান, সিডিএ’র একটি প্রতিনিধি এঙপ্রেসওয়ের র্যাম্পগুলো নগরের কোন কোন পয়েন্টে নামবে তা চসিকের কাছে উপস্থাপন করবে।