দক্ষিনে আশারবাতি এখন ওয়াশিকা আয়েশা

ইসহাক মোহাম্মদ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে প্রথম যুক্ত হয়েছিলেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। তৃতীয় মন্ত্রিসভায় ভূমি প্রতিমন্ত্রী, চতুর্থ মন্ত্রিসভায় একই মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রী করা হয় তাঁকে। এবারের নতুন মন্ত্রিসভা ঘিরে দক্ষিণ থেকে একাধিক মন্ত্রীর ‘খোয়াব’ দেখেছিলেন এই অঞ্চলের মানুষ। কিন্তু ঠাঁই হয়নি কারো। উল্টো বাদ পড়েছেন হাসিনা সরকারের প্রথম মন্ত্রীও! এতে দক্ষিণের মানুষজন অনেকটা হতাশ। তবে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সারের কন্যা ওয়াসিকা আয়েশা খানকে ঘিরে নতুন করে আশায় বুক বাঁধছেন তারা। 

সূত্র জানায়, ওয়াসিকা আয়েশা খানকে আবারো সংরক্ষিত আসনের এমপি করা হতে পারে। এরপর আওয়ামী লীগের এই অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদককে অর্থ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। ওয়াসিকার বাবার বাড়ি দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারায় এবং শ্বশুরবাড়ি লোহাগাড়া উপজেলায়।

nagad

মন্ত্রী হতে আঞ্চলিক হিসাব নিকাশ নির্ভর না করলেও নিজ অঞ্চলের কাউকে মন্ত্রিসভায় পাওয়া যেমন গৌরবের, তেমনি তাঁর হাত ধরেই ওই অঞ্চলের পরিবর্তন ঘটবে— এমন প্রত্যাশা থাকে সবার। নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবার নজর থাকে কোন অঞ্চল থেকে কাকে করা হচ্ছে মন্ত্রী।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ সাহেব মন্ত্রী ছিলেন। আমরা তাঁকে মন্ত্রী হিসেবে আবারও আশা করেছিলাম। কিন্তু তাঁকে পাইনি ,মন খারাপ। তবে মন্ত্রী করার বিষয়টি সম্পূর্ণ নেত্রীর বিষয়।’

দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাতকানিয়ার পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, ‘দক্ষিণ চট্টগ্রাম সমৃদ্ধ ও সম্ভাবনার জনপদ।  এ অঞ্চলের মানুষের আকাঙ্খা একজন ব্যক্তিকে মন্ত্রীত্বের মর্যাদা দেয়া হবে। এখানকার বাসিন্দাদের চাওয়া, নেত্রী আশা করি পরবর্তীতে বিবেচনায় নিবেন।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক সালাউদ্দিন সাকিব। দীর্ঘ ছাত্ররাজনীতি শেষ করে যুক্ত হয়েছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের বহরে। দায়িত্ব পালন করেছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নানা কর্মকাণ্ডে। তাঁর মতে, ‘দক্ষিণ জেলার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য একজন পূর্ণমন্ত্রী প্রয়োজন। যার মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রামের উন্নয়ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাবতে সহজ হবে।’

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের ৮টি উপজেলা এবং কক্সবাজারের ১১ টি উপজেলায় বিশাল জনগোষ্ঠীর বিস্তীর্ণ অঞ্চল। এই অঞ্চলে আরো বেশি উন্নয়ন, একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে ছয় লেনে পরিণত করা, টানেল হয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের কক্সবাজার পর্যন্ত যে সংযোগ সড়ক সেটিকে প্রশস্তকরণ, প্রস্তাবিত মেরিনড্রাইভ সড়কের পূর্ণ বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারের একজন প্রতিনিধিত্বমূলক পূর্ণমন্ত্রীর প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রতি একটি সুনজর আছে, তাঁর সুনজরের সারথী হিসাবে একজন প্রতিনিধি প্রয়োজন। আশা করছি পরবর্তী মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের সময় জননেত্রী আমাদের আকাঙ্খার প্রতিফলন মাথায় রাখবেন।’

তরুণ ছাত্রনেতা মোসাদ্দিকুল ইসলাম ফালু বলেন, ‘মন্ত্রী হিসেবে নিজ অঞ্চলের কাউকে পাওয়া আমাদের জন্য সৌভাগ্যের, গৌরবের। দক্ষিণ চট্টগ্রাম ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এ অঞ্চলে নবীন-প্রবীণ অনেক রাজনীতিবিদ আছেন। যাদের আমরা মন্ত্রী হিসেবে আশা করতেই পারি।‘

জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে ১৪৬ আসনে জয়ী হয়ে প্রথম মন্ত্রিসভা গঠন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালে সর্বপ্রথম চট্টগ্রাম দক্ষিণ থেকে প্রতিমন্ত্রী হিসাবে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ঠাঁই করে নেন। পরের সরকারে তাঁকে ওই মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রী করা হয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে কেউ মন্ত্রিত্বের স্বাদ পাননি।

প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ছেলে সাইফুজ্জামান জাবেদ বাদ পড়লেন। তাই এবার আরেক প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সারের কন্যা ওয়াসিকা আয়েশা খানকে ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন বুনছেন দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ। অনেকের ধারণা, কায়সারকন্যা ওয়াসিকাকে সংরক্ষিত আসনের এমপি করে অর্থ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। তবে এমন ধারণা উড়িয়ে দিয়েছেন কেউ কেউ। বলছেন, আগের মতো সংসদীয় গুরুত্বপূর্ণ কমিটির সভাপতি/চেয়ারম্যানের ভার পড়বে ওয়াসিকার কাঁধে। তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনার সম্পাদকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করছেন।

প্রধানমন্ত্রী যা করবেন মঙ্গলের জন্যই করবেন

মন্ত্রীত্ব পাওয়া না পাওয়া নিয়ে কোন হা-হুতাশ নেই ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের। তিনি বলছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তাঁর অভিভাবক, তিনি যা করবেন মঙ্গলের জন্যই।’

তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মন্ত্রী এমপির চেয়ে আমার এলাকার মানুষ বড়।
আগে মন্ত্রী ছিলাম, এলাকার মানুষকে সপ্তাহে দুই দিন সময় দিতাম। এখন প্রতি বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার এলাকার মানুষের সঙ্গে সময় কাটাব। রাজনীতি করি মানুষের ভালোবাসার জন্য। আমার জীবন আমি এলাকার মানুষের জন্য উৎসর্গ করলাম।’

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক