অক্টোবর ৪, ২০২৪ ৬:২৭ অপরাহ্ণ

যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সম্পর্কের নবসূচনা

চট্রলার কন্ঠ নিউ।

বহুল আলোচিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব ছিল একরম। তবে ভোটের পর পাল্টে গেছে সেই পরিস্থিতি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যেখানে তিনি দুই দেশের মধ্যে ‘নতুন অধ্যায়ের’ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। নতুন অধ্যায়টি কী হবে— সে বিষয়েও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, গত প্রায় ছয় মাস ধরে ঢাকা বা ওয়াশিংটন থেকে কোনও প্রতিনিধি দল আলোচনার জন্য অন্য দেশে সফর করেনি। ওই সময়ে একটি ‘সমঝোতা’ ছিল—নির্বাচনের সময়ে কোনও ধরনের সফর হবে না। নির্বাচন শেষ এবং এখন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আক্তারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ফেব্রুয়ারির শেষে ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। দলটির সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালকের বৈঠক করার কথা। পাশাপাশি পররাষ্ট্র সচিবও সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে পারেন। কর্মকর্তা পর্যায়ের এই বৈঠকের পরে আরও অনেক বৈঠক নিয়েও আলোচনা চলছে।

nagad
nagad

নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের নাগরিক অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি নির্বাচনের পরে ভোট ‘অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি’ বলে বিবৃতিও দেয় দেশটি। কিন্তু কূটনীতিতে সময় ও পরিস্থিতি পাল্টালে আচরণেও ভিন্নতা আসে বলে মনে করেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার মো. শহীদুল হক।

তিনি বলেন, ‘একেক সময় একেক দেশের একেক ধরনের অগ্রাধিকার থাকে। একেক সময় একেক দেশ একেক ধরনের আচরণ করে। আমাদের মনে হয় বিষয়টিকে সেভাবে দেখা দরকার।’

মার্কিন প্রেসিডেন্টের চিঠির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা বিষয়টি চিঠিতে প্রথমেই উল্লেখ করা হয়েছে, যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চিঠিতে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারিত্বের নতুন অধ্যায়ের কথা বলা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলোর প্রথমে উল্লেখ রয়েছে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি।

এছাড়া সহযোগিতার আরেকটি ক্ষেত্র হচ্ছে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু। শেষ দিকে অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের অভিন্ন ভিশনের কথা বলা হয়েছে। এর মাঝে রয়েছে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, জ্বালানিসহ অন্যান্য সহযোগিতা।

২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত একটি দেশ হওয়ার লক্ষ্য রয়েছে বাংলাদেশের। এর জন্য বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, যেমন বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণ থেকে শুরু করে শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন এনেছে সরকার।

এই প্রসঙ্গে শহীদুল হক বলেন, ‘এই বৃহৎ কর্মযজ্ঞ সম্পাদনের জন্য বৈদেশিক সহায়তারও প্রয়োজন। শুধু অর্থায়ন নয়, বরং কারিগরি জ্ঞান বা প্রযুক্তি বা শিক্ষাও জরুরি। এসব ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে তারা বাংলাদেশকে পাশে চায়, এটি তারা সবসময় উল্লেখ করে। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক আর্কিটেকচারের অনেক উপাদানের একটি হচ্ছে নিরাপত্তা এবং বাংলাদেশ কিছু কিছু এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করছে।’

উল্লেখ্য, নিরাপত্তা সহযোগিতার অধীনে প্রশিক্ষণ, তথ্য আদান-প্রদান, বৈশ্বিক শান্তিরক্ষা, মেরিটাইম ডোমেইন অ্যাওয়ারনেস, কোস্ট গার্ড শক্তিশালীকরণ, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশ সহযোগিতা করে থাকে। সম্প্রতি প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র তাদের তৈরি অত্যাধুনিক ড্রোন বাংলাদেশকে দিয়েছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তাসহ অন্যান্য বিষয়েও কাজ করে থাকে দুই দেশ।

আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করার যে চেষ্টা ও তাড়না সেটি অন্য যেকোনও বিষয়ের থেকে এখন অনেক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। এটি শুধু বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নয়, বরং সমগ্র অঞ্চলের স্থিতিশীলতাই এখানে গুরুত্ব পেয়েছে।

এ বিষয়ে শহীদুল হক বলেন, ‘স্থিতিশীলতার কথা সবসময় রাষ্ট্রই বলছে। বাংলাদেশ যদি অস্থিতিশীল হয়, তাহলে এ অঞ্চলের অনেক কিছু অস্থিতিশীল হয়ে যাবে। এই মুহূর্তে এটি সহ্য করার ক্ষমতা দক্ষিণ এশিয়ার নেই। এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা নষ্ট হতে দেওয়া উচিত হবে না।’

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ধারাবাহিকতা চলমান থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল সেটি ধীরে ধীরে প্রশমিত হবে, কিন্তু রেশ থেকে যাবে। ওই রেশটি প্রকাশ পাবে শ্রম অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে। এর প্রভাব হয়তো পড়তে পারে ব্রাসেলস ও জেনেভায়।’

বিভিন্ন শক্তির মধ্যে সূক্ষ্ম ভারসাম্য সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং এখন এটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা কোনও একটি পক্ষকে বাংলাদেশ পুরোপুরি সমর্থন দেবে–এই সম্ভাবনা নেই এবং সেটি ঠিকও হবে না।’

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক