নতুন রুপে ফয়েসলেক চিড়িয়াখানা

দুয়ারে কড়া নাড়ছে ঈদ। পহেলা বৈশাখ আর ঈদ মিলিয়ে টানা ছুটি তৈরি করেছে অন্যরকম আবহ। টানা ৫-৬ দিনের ছুটিতে ঈদ-বৈশাখ উদযাপনে মেতে উঠতে প্রস্তুত হচ্ছে চট্টগ্রাম নগরের বিনোদন কেন্দ্রগুলো। এবারের ঈদ আর বৈশাখের আনন্দ যেন দ্বিগুণ। দুটি উৎসবই পাশাপাশি। এতে করে বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে উপচে পড়া ভিড় থাকবে বলে আশা করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

ফয়’স লেক : ঈদ নিয়ে আসে বাঁধ-ভাঙ্গা উচ্ছ্বাস আর  আনন্দ  হারিয়ে যাওয়া। এই ছুটির সময়ে  সকলকে নিয়ে উল্লাসে মেতে উঠার সুযোগ পুরো বছরে কমই আসে। খুশির এই ঈদে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠতে প্রস্তুত হয়েছে ফয়’স লেক কমপ্লেক্স। সব বয়সী মানুষের বিনোদনের জন্য সেখানে রয়েছে এ্যামিউজমেন্ট পার্ক, ওয়াটার পার্ক সী-ওয়ার্ল্ড, ফয়’স লেক রিসোর্ট, বেইস ক্যাম্প সহ নানারকম আয়োজন।

চট্টগ্রাম শহরের কেন্দ্রে ৩৩৬ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত নগরীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র ফয়’স লেক কমপ্লেক্স যার মধ্যে রয়েছে প্রায় পাঁচ কিলামিটার জুড়ে আঁকাবাকা সৌন্দর্যমন্ডিত লেক। নগরের জিরো পয়েন্ট জি ই সি থেকে তিন কিলোমিটার যাওয়ার পর মূল সড়কের একটু পাশেই বিশাল এক তোরণ আর এই তোরণ পাড় করে ভেতরে প্রবেশ করলেই এ্যামিউজমেন্ট পার্ক আর এই পার্ক সাজানো হয়েছে অনেকগুলো রাইড নিয়ে।

উল্লেখযোগ্য রাইড গুলোর মধ্যে রয়েছে সার্কাস সুইং, বাম্পার কার, ফ্যামিলি রোলার কোস্টার, ফেরিস হুইল, পাইরেট শিপ, কফিকাপ, রেড ড্রাইল্লাইড, ইয়োলো ড্রাই-স্লাইড, বাগ বইন্স ইত্যাদি খাবার-দাবারের জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট যেখানে পাওয়া যায় দেশী-বিদেশী নানা রকম খাবার এ্যাডভেঞ্চারল্যান্ড রেস্টুরেন্ট ঠিক পাশেই দেখা মিলবে হরেক রকম মাছের খেলা। এ্যামিউজমেন্ট পার্কের সিড়ি ডিঙিয়ে উপরেউঠলেই দেখা মিলবে ফয়’স লেকের।

লেকের দু-পাশে শুধু যেন সবুজের ছোঁয়া আর দিগন্ত জুড়ে নীল আকাশ জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর লেকের দুপাশ জুড়ে রয়েছে সারি সারি পাহাড় আর হরেক রকম গাছ-গাছালি। এখানকার বিভিন্ন পাহাড়ের নামকরণ করা হয়েছে অরুণিমা, জলটুঙ্গি, গোধুলি, অস্তাচল, আকাশমণি,, বনশ্রী, হিমঝুরি, আসমানি, গগণদ্বীপ উদয়ণ প্রভৃতি নামে। এসব পাহাড়ে নানা প্রজাতির গাছগাছালির মধ্যে রয়েছে সেগুন, গর্জন, কড়াই, একাশিয়া, আগর সোনালু, কনকচূড়া, রাধাচূড়া, কাঠবাদাম, ডুমুর, পাম, থাইকড়াই সহ বিভিন্ন প্রজাতির বনজ গাছ। ঔষধি গাছের মধে রয়েছে বসাক, নিম, অর্জুন, বিশল্যকরণী, পাথরকুচি, দারুচিনি, স্বর্ণগন্ধা, মতমূলি সহ নানাপ্রজাতির গাছ। ফুলের মধ্যে গোলাপ, গাঁদা, রঙ্গন, জুই, চম্পা, করবী, বকুল, নয়নতারা, চেরি ইত্যাদি। পাহাড়ের ঠিক উপড়েই আছে ফটো কর্ণার যেখানে দেখা মিলবে নানা ভঙ্গিতে হরেক রকম প্রাণীর ভাস্কর্য। লেকের গা-ঘেঁষেই তৈরি করা হয়েছে সমুদ্রিক প্রাণীদের ভাস্কর্য নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে পিকনিক স্পট এ্যাকুয়াটিক জোন। সকল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অক্ষুন্ন রেখে সব বয়সী মানুষদের জন্য কনকর্ড এন্টারটেইন্টমেন্ট কো: লি: গড়ে তুলেছে বিনোদন কেন্দ্র।

ফয়’স লেকের বোট ষ্টেশন থেকে ইঞ্জিন বোটে দশ মিনিটের পথ পেরুলেই দেখা মিলবে দেশের সর্ববৃহৎ ওয়াটার পার্ক সী-ওর্য়াল্ড। ফয়’স লেকের একপ্রান্তে গড়ে তোলা হয়েছে জলের রাজ্যে এক রোমাঞ্চকর এই পার্ক। দিনভর সকলকে নিয়ে জলেকেলি উৎসবে মেতে উঠার জন্য রোমাঞ্চকর সব রাইডে গড়ে তোলা হয়েছে এ জায়গাটি। এখানকার সবচেয়ে আর্কষণীয় স্থান কৃত্রিম সমুদ্র সৈকত যা ওয়েভ-পুল নামে পরিচিত। সাগরের ঢেউয়ের মতোই উঁচু উঁচু ঢেউ খেলা করে এখানে। টিউবে বসে ঢেউয়ের তালে ভেসে বেড়ানো যায় ইচ্ছেমতো, ডুবে যাওয়ার ভয় থাকে  না একদম। ওয়েভ-পুলেন ঠিক পাশেই রয়েছে ড্যান্সিং জোন যেখানে কৃত্রিম বৃষ্টি, নানা রঙ্গের আলো আর মন মাতানো মিউজিক তালে তালে নেয়ে উঠে আগত দর্শনার্থীরা। চিলড্রেন পুলটি সাজানো বাচ্চাদের উপযোগী অনেকগুলো রাইড নিয়ে যা দিয়ে অনায়াসে উপভোগ করতে পারে তাদের জন্য গড়ে তোলা এ স্বপ্ন রাজ্যটি। ঈদের লম্বা ছুটি কাটাতে জন্য সঠিক গন্তব্য হতে পারে ফয়’স লেক রির্সোট ও বাংলো। রিসেটি যেতে ও আসাতে নৌপথ ব্যবহার করতে হয়। ওয়াটার পার্ক সী-ওয়াল্ড লাগোয়া রির্সোটে রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পাহাড়মুখী ও হ্রদমুখী কক্ষ যেখান থেকে উপভোগ করা যাবে সবুজ প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। নিরিবিলি পরিবেশে লেকের পাশেই পাহাড়ের কোল ঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে বাংলো। এখানে থাকলে মনে হবে এ বুঝি জন মানবহীন নির্জন এক দ্বীপ। বাংলোর ঝুলন্ত বারান্দা থেকে প্রকৃতির স্পর্শ পাওয়া যায় সহজেই। রির্সোট ও বাংলোয় আগত পর্যটকদের খাবার-দাবারের জন্য রয়েছে মান সম্পন্ন রেস্টুরেন্ট যা ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে কাবাব পরিবেশনের জন্য। অর্ডার দিলে পাওয়া যায় দেশি-বিদেশী সব মজাদার খবার।

ঈদের দিন থেকে দর্শনার্থীদের জন্য নানা রকম আয়োজনে খোলা থাকবে পুরো কমপ্লেক্স। ঈদের ১০ দিন পর্যন্ত থাকবে। গেম শো মিউজিক শো এবং ম্যাজিক শো সহ বেশ কিছু ইভেন্ট। ওয়াটার পার্ক সী-ওয়ার্ল্ডে অনুষ্ঠিত হবে ডিজে শো। এতো সব আয়োজনে ঈদ আনন্দে অনবিার্য গন্তব্য হতে চলেছে ফয়’স লেক কমপেক্স। এই কমপ্লেক্সের নতুন সংযোজন বন পাহাড় ঘেরা নির্মল প্রাকৃতিক পরিবেশে ফয়’স লেক বেইস ক্যাম্প যা এক অনন্য সৌন্দর্যের প্রতীক। থোকা থোকা সবুজে ঘেরা উঁচু-নিচু পাহাড়ি-পথ, সাপের মত একে বেঁকে চলা স্বচ্ছ জলরাশি, পাখ-পাখালির ডাক যে কাউকে বিস্ময়কর এক অনুভূতি দেবে। লেকের পাড় বেয়ে উপরে উঠলেই বেইস ক্যাম্পের মূল ফটক আর এখানে ভেতরে প্রবেশ করে পাহাড়ি পথে সিড়ি পেরিয়ে জিপালাইনের কাঠামো এখান থেকেই তারে ঝুলে শূণ্যে ভেসে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যাওয়ার ব্যবস্থা। জিপলাইনের চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে পাহাড়ি পথ বেয়ে উঠলেই ট্রিটপ এডভেঞ্চার যেখানে দশটি ধাপের নানারকম এ্যাডভেঞ্চার মূলক কার্যক্রম। বেইস ক্যাম্পের সবকিছুই আউটডোর কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে আর্চারি, ওয়াটার জিপলাইন, ক্রলিং, মাডট্রেইল, প্যাডেল বোটিং, ওয়াটার জিপলাইন, রিভার ক্রসিং। ভ্রমণের পূরিপূর্ণতা দিতে সান্ধ্যকালীন সময়ে পুরো ক্যাম্প জুড়ে নাইটসাফারির ব্যবস্থা।  ফয়’স লেক বেইস ক্যাম্পে ভ্রমণ আরো রোমাঞ্চকর করতে খোলা আকাশের নিচে তাবু টাঙ্গিয়ে রাত কাটানোর সু-ব্যবস্থা। প্রাতঃরাশ থেকে শুরু করে দুপুর ও বিকেলের খাবার সহ বার-বি-কিউ-এর আয়োজন। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য, নিরাপত্তা, আতিথেয়তার সকল সুযোগ সুবিধা মিলে ফয়’স লেক বেইস ক্যাম্প দেশের পর্যটনে এক বিশেষ মাইলফলক।

ঈদ উপলক্ষ্যে নতুন এই ফয়’স লেক  আয়োজনের সাথে পর্যটক দর্শনার্থীদের সাথে পরিচয় করে দিতে থাকছে আর্কষনীয় মূল্য ছাড়ের ব্যবস্থা।

অন্যদিকে তার পাশেই তৈরি হচ্ছে চট্টগ্রামের একমাত্র চিড়িয়াখানা। নানান রঙে রাঙিয়ে দর্শনার্থীদের বিনোদনের এই কেন্দ্রটি সাজিয়ে তুলছে কর্তৃপক্ষ।

মরিচা পড়া খাচাগুলো ঘষে মেজে, নতুন করে রাঙিয়ে তুলছেন তারা। সম্প্রতি এই চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের জন্য পাশের কয়েকটি পাহাড়ঘিরে ওয়াকওয়ে গড়ে তোলায় নতুন মাত্রা দিয়েছে এই চিড়িয়াখানা।

তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এবার চিড়িয়া খানার বিশেষ আকর্ষণ জো-বাইডেন আর জয়ার সন্তানরা। ইতোমধ্যে তারা নিজেদের মতো করে খাচার ভেতরে ঘুরাঘুরি শুরু করেছে। পাশাপাশি দেখা মিলেছে অজগরের বাসায় একুরিয়াম স্টাইলে ঘর। নতুন করে সাজানো হয়েছে এই খাচাটিকেও।

বাঘের খাঁচার ঠিক পূর্ব পাশেই মিলবে রংপুর চিড়িয়াখানার সঙ্গে প্রাণী বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে পাওয়া ‘লালপাহাড়’ আর ‘জলপরী’র দেখা।

প্রতি মাসে প্রায় লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটে এই চিড়িয়াখানায়। এবারের ঈদের ৫ দিনের ছুটিতে সকাল ১০ টা হতে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার দর্শনার্থী আশা করছেন কর্তৃপক্ষ।

তারা বলেন, আমরা দর্শনার্থীদের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যমকে যাতে চাহিদা অনুযায়ী উপস্থাপন করতে পারি সেই লক্ষ্যে পরিচর্যা শুরু করেছি। খুব দ্রুত সময়ে সম্পূর্ণ নতুন রুপে সেজে উঠবে এই চিড়িয়াখানা।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক