মুক্তি পাচ্ছেন না বাবুল আক্তার

স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় উচ্চ আদালত থেকে সম্প্রতি জামিন পেয়েছেন সাবেক এসপি বাবুল আক্তার। আজ (রবিবার) তার মুক্তি পাওয়ার কথা। সেই অনুযায়ী তার জামিনের বেইল বন্ড কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু আজই তাকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না বলে কারাসূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. ইকবাল হোসেন সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘তিনি আজ মুক্তি পাচ্ছেন না, এটি কনফার্ম করতে পারি। তার মুক্তি আগামীকাল হতে পারে আবার নাও হতে পারে। কাগজপত্র সব ঠিকঠাক থাকলে।’

বেইল বন্ড হাতে পেয়েছেন কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, সেটা পেয়েছি। ক্লিয়ারেন্স নিতে পারিনি আজ। কালকের দিকে এটা নিয়ে কাজ করবো। আজ রাত হওয়ায় কাজ করার সুযোগ নেই।’

এদিকে বাবুল আক্তারকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছেন মিতুর বাবা। আগামীকাল মঙ্গলবার চেম্বার বিচারপতির আদালতে এই আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।

KSRM
KSRM

এসপি বাবুল আক্তারের আইনজীবীর দাবি, কোনো এক ‘অশুভ শক্তি’ শুরু থেকেই তাকে এই মামলায় ফাঁসানোর চক্রান্ত করছে। আর সেই শক্তি কোর্ট থেকে শুরু করে কারাগার পর্যন্ত সবকিছুতে প্রভাব বিস্তার করায় বাবুল আক্তারের কারামুক্তিতে বিলম্ব হচ্ছে।

বাবুল আক্তারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন সন্ধ্যায় সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘নানা তালবাহানার পর আজ বিকেলে আদালত থেকে জামিনের বেইল বন্ড কারাগারে পাঠানো হয়। কথা ছিল বিকেল ৫টায় তাকে মুক্তি দিবে। আমাদের বলা হয়েছে তার আগেই যেন আমরা যাই। কিন্তু আগে গেলেও আজ মুক্তি দিবে না বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। আগামীকাল সকাল ১০টার আগেই মুক্তি দেওয়ার কথা তারা জানিয়েছে।’

জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে করা আবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জামিন আদেশেই উচ্চ আদালত বলেছেন স্টে অর্ডার ছাড়া তার মুক্তি কেউ আটকাতে পারে না। আর জামিন হওয়ার পরেও তিনি কারাগারে থাকাটা তো কষ্ট দেওয়া, হয়রানি করা। যে অশুভ শক্তি শুরু থেকেই কাজ করছে এর পেছনে সেই শক্তিই এখন প্রভাব বিস্তার করছে। মুক্তি দিলে সে তো পালিয়ে যাচ্ছে না। কোর্ট যদি তাকে আবার আত্মসমর্পণ করতে বলে সে করবেন।’

গত ২৭ নভেম্বর স্ত্রী মাহমুদা খানম (মিতু) হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারকে জামিন দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে বাবুলের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।

সেদিন আইনজীবী শিশির মনির বলেছিলেন, বাবুল আক্তার অন্যান্য আগেই জামিনে আছেন। স্ত্রী হত্যা মামলায় জামিন পাওয়ায় তার মুক্তিতে বাধা নেই। বাবুল আক্তার তিন বছর ৭ মাস ধরে কারাগারে আছেন, এই বিবেচনায় আদালত তাকে ৬ মাসের অন্তবর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন। একইসঙ্গে বাবুল আক্তারকে কেন স্থায়ী জামিন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন।

দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত ১৪ আগস্ট চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে জামিন আবেদন করেছিলেন এসপি বাবুল আক্তার। ১৮ আগস্ট বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে আদেশ দেন। পরে তিনি হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে তৎকালীন পুলিশ সুপার ও মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।

তবে মামলায় স্ত্রী হত্যাকাণ্ডে স্বামী বাবুল আক্তারেরই সম্পৃক্ততা পায় পিবিআই। ২০২১ সালের ১২ মে আগের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। একইদিন বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করেন মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন। ওইদিনই মামলাটিতে বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে পিবিআই। সেই থেকে কারাগারে রয়েছেন বাবুল।

এদিকে, প্রথম মামলায় পিবিআইয়ের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর নারাজির আবেদন করেন বাবুলের আইনজীবী। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ৩ নভেম্বর নারাজি ও পিবিআইয়ের প্রতিবেদন খারিজ করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন। এরপর দুটি মামলাই তদন্ত করতে থাকে পিবিআই। তবে পরবর্তী সময়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি মিতুর বাবার দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এরপর একই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রথম মামলাটি অধিকতর তদন্ত শেষে বাবুলসহ ৭ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।

গত বছরের ১৩ মার্চ আলোচিত মামলাটিতে বাবুল আক্তারসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক