সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার মুখে চিটাগাং কিংস

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) এবারের আসরে চট্টগ্রামের প্রতিনিধিত্ব করছে ‘চিটাগং কিংস’। মঙ্গলবার খুলনা টাইগার্সের সাথে ছিল দলটির প্রথম ম্যাচ। দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হতেই চিটাগং কিংসের হয়ে ব্যাটিংয়ে নামেন দুই ওপেনার নাইম ইসলাম ও পারভেজ হোসেন ইমন। এ সময় দুজনেরই মাথায় ছিল দলের লোগোহীন নিম্নমানের হেলমেট।

শুধু তাই নয়, ফিল্ডিংয়ের সময় দলটির উইকেটরক্ষক এবং অধিনায়ক মোহাম্মদ মিথুনকে ব্যবহার করতে দেখা গেছে প্রতিপক্ষ দলের প্যাড! এমন নানা অব্যবস্থাপনা আর প্রথম ম্যাচে হোঁচটে ক্ষুব্ধ চট্টগ্রামের ক্রিকেটপ্রেমীরা। আবার অনেকে ঠাট্টার ছলে বলছেন, ‘কানাডিয়ান হোস্ট এনে গুলিস্তানের হেলমেট দিয়েছে ব্যাটারদের।’

বিপিএলের ১১তম আসর দিয়ে দীর্ঘদিন পর দেশের পেশাদার এই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট লীগে ফিরেছে চিটাগং কিংস। নিজেদের প্রথম ম্যাচে খুলনার বিপক্ষে দুপুর ১২টায় মাঠে নামে দলটি।  দলের ম্যাচ দেখতে মিরপুরে উপস্থিত ছিলেন চিটাগং কিংসের মালিক সামির কাদের চৌধুরী এবং মেন্টর শহীদ আফ্রিদি। প্রতিপক্ষের দেওয়া ২০৪ রানের বড় টার্গেট তাড়া করতে নেমে ৩৭ রানের ব্যবধানে হারে চট্টলার ফ্র্যাঞ্চাইজিটি।

খেলার শুরুতে টসে জিতে খুলনাকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামের হয়ে উইকেটরক্ষক এবং অধিনায়কের ভার ছিল মোহাম্মদ মিথুনের কাঁধে। উইকেটরক্ষক হয়ে মাঠে নামতেই দর্শকদের দৃষ্টি যায় মিথুনের হেলমেট এবং প্যাডের ওপর। তার হেলমেটটি ছিল নীল একটি কাপড় দিয়ে মোড়ানো। হেলমেটটিতে দলের লোগো পর্যন্ত ছিল না। অন্যদিকে, তার ব্যবহৃত প্যাডটি ছিল প্রতিপক্ষ দল খুলনার।

প্রথম ইনিংস শেষে খুলনার দেওয়া টার্গেট তাড়া করতে মাঠে নামে দুই ওপেনার নাইম ইসলাম এবং পারভেজ হোসেন ইমন। ওই সময় তাদেরকেও সেই ‘রুগ্ন’ হেলমেট ব্যবহার করতে দেখা যায়। এতে গোটা ক্রিকেটপাড়ায় রোল পড়ে যায় হাসির। এদিকে, চট্টগ্রামের ক্রিকেটপ্রেমীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

মালিকপক্ষের ‘শো-আপ’, চট্টগ্রামের বদনাম!

ক্রিকেটপ্রেমীদের অনেকে মনে করছেন, মোটা অঙ্কের টাকায় কানাডিয়ান মডেল ইয়াশা সাগরকে হোস্ট হিসেবে এনে খেলোয়াড়দের কিটই (সরঞ্জামাদি) নিশ্চিত করতে পারেনি ‘চিটাগং কিংস’। ক্রিকেটের প্রতি নয়, দলটির মালিকপক্ষ শো-আপ করতেই দলের মালিকানা নিয়েছে। তাদের কাছে চট্টগ্রামের সম্মানের যেন কোনো মূল্য নেই।

এদিকে, ‘চিটাগং কিংস’ এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে দলটিকে উৎসাহ যোগাতে করা পোস্টের মন্তব্যের ঘরেও দেশের নানা প্রান্তের দর্শক এবং চট্টগ্রামবাসীকে ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা গেছে। আশিক এলাহী শিবলী নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী মন্তব্যের ঘরে ক্ষোভ ঝেড়ে লিখেছেন, ‘কী একটা অবস্থা! চিটাগং এর মালিক কানাডিয়ান হোস্ট নিয়ে আসছে, মেন্টর হিসেবে আফ্রিদিরে আনছে। অথচ বেসিক জিনিসগুলোর খবর নাই! প্লেয়ারদের কাপড় পেঁচিয়ে হেলমেট ও প্যাড ব্যাবহার করতে হচ্ছে! ফিল্ডিংয়ের সময় দেখলাম মিথুন খুলনার প্যাড ব্যাবহার করছে!’

ইমন নামে আরেকজন মন্তব্য করেছেন, ‘চট্টগ্রামের টিম ম্যানেজম্যান্টকে বলছি নতুন হেলমেট কেনার টাকা না থাকলে আমাদেরকে বলুন নয়তো ভিক্ষা করুন। এভাবে দেশের সম্মান নষ্ট করবেন না। পুরাতন হেলমেটের ওপর কাপড় পেচিয়ে আপনারা বিপিএলের সৌন্দর্য নষ্ট করে বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে হাসির পাত্র বানাচ্ছেন।’

‘পুরো দলটাকে জোকারের দল বানিয়েছে’

নগরের জিইসি মোড়ে সামসাং ব্র্যান্ডের শো-রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে খেলা উপভোগ করছিলেন দুর্জয় নামে এক শিক্ষার্থী। চিটাগং কিংস দল কেমন লাগলো—প্রশ্ন করতেই বিরক্তি নিয়ে তিনি সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘মিঠুন তো জাতীয় দলেই চান্স পায় না। তাকে আবার করা হয়েছে চট্টগ্রাম কিংসের ক্যাপ্টেন! মানে কিভাবে দল সাজাতে হয়—ন্যুনতম আইডিয়াও নাই টিম ম্যানেজম্যান্টের। পুরো দলটাকে জোকারের দল বানিয়েছে তারা।’

তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক যুবক বলেন, ‘প্রতিবারই চট্টগ্রাম টিমটার খেলা দেখে হতাশ হই। কিন্তু এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। দলে ভালো প্লেয়ার নেই, অথচ কোথাকার কোন মডেলকে এনে এমনভাবে উপস্থাপন করতেছে যেন খেলাটা ফ্যাশন শো। ওই টাকা দিয়ে ভালো ভালো প্লেয়ার কেনা যেতো না? ট্রফি নেওয়ার তো ইচ্ছা নেই। শুধু শো-আপ করতেই দল কেনা হয়েছে।’

‘চট্টগ্রামে বিপিএল খেলা হবে। চট্টগ্রামকে রিপ্রেজেন্ট করে এমন একটা দলও আছে। অথচ সেই দলের প্রচারণা নেই। কোথাও কোনো একটা পোস্টারও দেখছি না। এমনকি চট্টগ্রামের দলটির ফেসবুক পেজও সামনে আসেনি এখন পর্যন্ত।’-যোগ করেন তিনি।

‘খেলার চেয়ে অন্যদিকে মন দেওয়ায় চট্টগ্রামবাসী ক্ষুব্ধ’

চট্টগ্রামের ক্রীড়াসংগঠক এবং সাবেক ক্রিকেটার কায়সার আলী চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘হেলমেট জিনিসটি ক্রিকেটের একটা মেজর পার্ট। কানাডিয়ান মডেলের পেছনে ইনভেস্টের চেয়েও দলটির খেলোয়াড়দের সরঞ্জামের ওপর কর্তৃপক্ষের বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। বাজার থেকে একটা হেলমেট কিনেছেন ঠিক; কিন্তু এর উপরে যে চিটাগং কিংসের লোগো করতে হবে; সেটাও তাদের মনে নেই। খেলার দিকে মন না দিয়ে অন্যদিকে মন দেওয়ায় চট্টগ্রামবাসী ক্ষুব্ধ।’

তামিম ইকবালের সম্প্রতি দেওয়া বক্তব্যকে উদাহরণ হিসেবে টেনে সাবেক ক্রিকেটার কায়সার বলেন, ‘বিপিএলে শুধু কনসার্ট ছাড়া নতুনত্ব কিছুই পাইনি। ক্রিকেট মাঠে মনোনিবেশ এবং মানসিক একটা গেম। খেলার মাঠে আইক্যাচিং (নজরকাড়া) যেকোনো কিছু খেলোয়াড়দের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ফলে খেলাতে তারা মনোযোগী হতে পারে না, এটাই বাস্তবতা।’

‘চিটাগং কিংস’ শিবিরে যারা…

মোহাম্মদ মিঠুন (অধিনায়ক), নাঈম ইসলাম, উসমান খান, হায়দার আলী, শামীম পাটোয়ারি, পারভেজ ইমন, থমাস ও’কননেল, মোহাম্মদ ওয়াসিম, শরিফুল ইসলাম, খালেদ আহমেদ ও আলিস আল ইসলাম।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক