সন্ত্রাসী সজ্জাদ গ্রেফতার

ইমাম শোয়েব।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ ওরফে বুড়ির নাতিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার (১৫ মার্চ) রাজধানী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিষয়টি চট্রলার কণ্ঠকে  নিশ্চিত করেছেন নগর পুলিশের উত্তর জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) আমিরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সিএমপির একটি সিভিল টিম ঢাকার বসুন্ধরা সিটি থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করেছে। তাকে চট্টগ্রাম আনা হবে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।’

প্রত্যক্ষদর্শী একটি সূত্র জানিয়েছে, ওই সময় ছোট সাজ্জাদ রাজধানীর বসুন্ধরা সিটিতে ঈদের শপিং করছিলেন! সঙ্গে আরো কয়েকজন সহযোগী থাকলেও পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সটকে পড়েন।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী, বায়েজিদ বোস্তামি, চান্দগাঁও এবং পাঁচলাইশ এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ ওরফে ‘বুড়ির নাতি’। হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ ১০টিরও বেশি মামলার আসামি তিনি। বায়েজিদ বোস্তামী থানা-সংলগ্ন হাটহাজারীর শিকারপুরের মো. জামালের ছেলে সাজ্জাদ।

আলোচিত এইট মার্ডার মামলার মৃত্যুণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি জামায়াত-শিবির ‘ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত সাজ্জাদ আলী খানের সহযোগী হিসেবে এই ‘ছোট সাজ্জাদ’ অপরাধজগতে পা রাখেন। বিদেশে বসেই সাজ্জাদ আলী খান নির্মাণাধীন ভবন, বাসাবাড়ি এমনকি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি করান তাকে দিয়ে।

সবশেষ ২৮ জানুয়ারি রাতে ফেসবুক লাইভে এসে বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুর রহমানকে প্রকাশ্যে পেটানোর হুমকি দেন তিনি। ফেসবুক লাইভে সাজ্জাদ হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তোর (ওসি) যদি শাস্তি না হয়, আমি তোকে কুত্তার মতো পেটাবো। অক্সিজেন থেকে বায়েজিদ পর্যন্ত কুত্তার মতো ন্যাংটা করে পেটাবো। কোর্টের রায় আসা পর্যন্ত তোরা টিকে থাকবি। যেখানেই থাকস আমি পিটাবো। প্রয়োজনে আমি মরে যাবো, তোদেরকে মেরে। তবু আমি হার মানবো না। দেখি, তোদের জোর বেশি না আমার। আরিফ তুই প্রস্তুত থাকিস। তোর উচ্চপদস্থ যারা আছে তাদেরকে বলিস।’

এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন ওই ওসি।

গত বছরের ২৯ আগস্ট নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার অক্সিজেন–কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে মাসুদ কায়সার (৩২) ও মোহাম্মদ আনিস (৩৮) নামে দুজনকে হত্যা করা হয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসা ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে দুপক্ষের দ্বন্দ্বের জেরেই এ খুন হয়। এই চাঞ্চল্যকর ডাবল মার্ডারের ঘটনার দুই মামলায় সাজ্জাদ ও তার সহযোগীদের আসামি করা হয়।

একইবছরের ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে নগরের চান্দগাঁও থানার অদূরপাড়া জাগরনী সংঘ ক্লাব সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে মাইক্রোবাস থেকে নেমেই স্থানীয় ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন তাহসীনকে (২৭) গুলি করে হত্যা করে এই দুর্ধর্ষ সাজ্জাদ বাহিনী।

হাটহাজারী, বায়েজিদ বোস্তামি, চান্দগাঁও এবং পাঁচলাইশ এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ ওরফে ‘বুড়ির নাতি’। সবশেষ গত বছরের ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে। অবশ্য পরের মাসে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন।

জামিনে বেরিয়ে এসে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেল চারটার দিকে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার কালারপুল এলাকায় শটগান হাতে সাজ্জাদ হোসেনসহ আরও দুজন গুলি করতে করতে একটি নির্মাণাধীন ভবনে প্রবেশ করেন। এরপর ওই ভবন মালিকের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।

এছাড়া একই বছরের ৫ জুলাই বায়েজিদ থানার বুলিয়াপাড়া এলাকায় একটি বাসায় গুলি করেন সাজ্জাদ তাঁর সহযোগীদের নিয়ে। আর গত বছরের ২৭ অক্টোবর চাঁদা না পেয়ে দলবল নিয়ে মো. হাছান নামের এক ঠিকাদারের চান্দগাঁও হাজীরপুল এলাকার বাসায় গিয়েও গুলি করে সাজ্জাদ বাহিনী।

গত ৫ ডিসেম্বর নগরের অক্সিজেন মোড় জালালাবাদ পেট্রোল পাম্পের পেছনে সাততলা ভবনের পঞ্চম তলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে ধরতে অভিযানে যায় পুলিশ। তাদের উপস্থিতি টের পেয়েই গুলি চালান সাজ্জাদ। গুলিতে পুলিশের দুই সদস্যসহ মোট চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।পুলিশের ওপর গুলি চালিয়ে সাজ্জাদ পালিয়ে গেলেও তার স্ত্রী পরিচয় দেওয়া এক নারীকে আটক করা হয় তখন।

পুলিশ তখন জানিয়েছিল, সাজ্জাদের অবস্থান শনাক্ত করে গভীর রাত সাড়ে ৩টা থেকে ভোর ৪টার দিকে অভিযানে যান পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়েই সাজ্জাদ তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে থাকেন। একপর্যায়ে পাশের একটি ভবনের ছাদে লাফ দিয়ে পালিয়ে যায় এই শীর্ষ সন্ত্রাসী। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন ওই দুজন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক